সব গল্প শুরু হয় আলো থেকে, আর আমি জন্মেছিলাম ছায়ার ভেতর, যেখানে শব্দগুলো ছিল আমার একমাত্র উত্তরাধিকার।
আমি এমন একজন, যার নাম কোনো মলাটে ছিল না, কিন্তু প্রতিটি না-পড়া লাইনে লুকিয়ে ছিল নিজেরই ছায়া।
চেহারায় কিছু ছিল না মনে রাখার মতো, কথায়ও না; শুধু কলমটা জানত আমি ভেতরে ভেতরে প্রতিদিন ভেঙে পড়ে গল্প হয়ে ওঠার প্রচেষ্টায় মগ্ন ছিলাম।
কেউ আমাকে খুঁজত না, আমিও নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম শব্দের মধ্যে।
শুধু একজন লেখক যে কিনা অপ্রকাশিত, অপঠিত, অথচ নিজের খাতা ভর্তি করে যেতাম একরাশ না-বলা কথায়।
ঢাকার পুরোনো শহরে, একটি ক্ষয়িষ্ণু লাইব্রেরির পাশেই আমার ভাড়া বাসা ছিল। সেখানে বই আর শোকের মধ্যে আমার দিন কাটত। মাঝে মাঝে লেখাগুলো পাঠাতাম ছোটখাটো পত্রিকায়, কোনোটা ছাপা হতো, কোনোটা হারিয়ে যেত। সেই হারিয়ে যাওয়ার ভিড়েই একদিন একটা চিঠি আসে—
আপনার গল্পগুলো পড়লে মনে হয়, আপনি কাউকে ভুলে যেতে চান কিন্তু পারেন না। আপনি কি তাঁকে এখনো মনে রাখেন ?
চিঠিটার নিচে নাম ছিল না। শুধু এক টানাটানা হস্তাক্ষরে লেখা ছিল: ‘একজন পাঠিকা’।
প্রথমে চমকে গিয়েছিলাম। কারণ সত্যিই তো আমার গল্পগুলোয় সব সময় একজন থেকে যাওয়া কেউ থাকে। এক অদৃশ্য মুখ, এক অপূর্ণ বিদায়। কিন্তু তা পুরোটাই আমার কল্পনা থেকে বানানো।
তারপর একদিন, আরেকটি চিঠি, তারপর আরেকটি। চিঠির সঙ্গে মাঝে মাঝে কিছু শুকনো পত্র, কবিতা, পুরোনো সিনেমার টিকিট, বা একটুকরো শাড়ির ফিতা থাকত। এই পাঠিকার সঙ্গে আমার অদ্ভুত এক যোগসূত্র তৈরি হলো সেই থেকেই।
একসময় তার নামও জানলাম : ‘সায়রা’।
আমাদের কখনো দেখা হয় নি। শুধু চিঠির আদান-প্রদান, লাল রঙের খামে, কালচে নীল কালিতে লেখা।
সে লিখত—
আমি যখন আপনার গল্প পড়ি, মনে হয় যেন আমার নিজের কথাগুলো আপনি আগেই লিখে রেখেছেন। আমরা কি কোনো আগের জন্মে একসঙ্গে ছিলাম ?
আমি উত্তর দিতাম—
তুমি যদি অতীত হতে, আমি তার দিনপঞ্জি হয়ে যেতাম। কিন্তু তুমি তো বর্তমান। অথচ স্পর্শহীন। বুঝতে পারো, কেমন লাগে ?
চিঠিগুলোর মাধ্যমে আমরা এক ধরনের মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছিলাম। না, সেটা কখনো বলা হয় নি। ‘ভালোবাসি’ এই শব্দটা কোনোদিন উচ্চারিত হয় নি। কারণ সেটা ভালোবাসা না মায়া তা ছিল অস্পষ্ট, ধোঁয়াটে!
কিন্তু শব্দের ফাঁকে, পাতার ভাঁজে, শুকনো কালির অপেক্ষায় যে তীব্র মায়া জমে থাকত তাতে কোনো সন্দেহ ছিল না, কিছু একটার জন্ম হচ্ছিল।
সেদিন ছিল এক বর্ষার বিকেল। আকাশ ছিল থমথমে, ঠিক যেমন আমার ভেতরের নিঃশব্দতা। হঠাৎ করেই পোস্টম্যানের ডাক, দরজায় এসে একটা খাম দিয়ে গেল।
খামটা ছিল একদম ভিন্নরকম। সাদা খামের ভেতর মোটা করে মোড়ানো একটা কৌটা। খাম খুলতেই বুক ধক করে উঠল। ভেতরে একজোড়া লাল রেশমি চুড়ি।
সেই চুড়িগুলো যেন কোনো মেলার হাড়ভাঙা ভিড় থেকে উঠে এসেছে। হালকা ধুলোতোলা গ্লাসচুড়ি নয়, নিটোল লাল রেশমি। একেবারে চুপি চুপি পরিয়ে দেওয়ার মতো।
আর ছিল একটুকরো চিঠি। কোনো কবিতা নয়, কোনো রূপক নয়। শুধু গোটা গোটা অক্ষরে লেখা—
আমি যদি কোনোদিন আপনার সামনে দাঁড়াতে পারতাম, এই চুড়িগুলো পরেই আসতাম। আপনি চিনতে পারতেন কি ?
আমি কাঁপা হাতে চুড়িগুলো তুললাম। একটা চুড়ি নিজের আঙুলে গলিয়ে দেখলাম। গ্লাসের মতো ঠান্ডা নয়, যেন গায়ে আঁচ লেগে থাকে। যেন সেই হাতের উষ্ণতা এখনো লেগে আছে।
সেই মুহূর্তে মনে হলো, আমি কোনো চিঠি নয়, কোনো উপন্যাস নয়, বরং একটা মানুষের একান্ত স্পর্শ হাতে ধরে আছি।
চুড়ির কাচে সূর্যরশ্মি পড়ে লাল ছায়া ফেলছিল ঘরের মেঝেতে। যেন কোনো অদৃশ্য নারী এসে বসেছে আমার সামনে। তার চোখে সেই চেনা বেদনা, আর ঠোঁটে সেই চিরচেনা প্রশ্ন, আপনি কি চিনতে পারবেন আমাকে ?
আমি কোনোদিন জবাব দেই নি সেই চিঠির। শুধু সেই চুড়িগুলো যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম আমার ডেস্কের এক গোপন ড্রয়ারে।
একদিন হঠাৎ সে চিঠি বন্ধ করে দিল।
না, কোনো ঝগড়া হয় নি। কোনো তর্ক, কোনো অবহেলা নয়। শুধু এক চিঠিতে লিখেছিল :
আমার জীবন অন্যদিকে বাঁক নিচ্ছে। আপনার শব্দগুলোকে পেছনে রেখে আমাকে এগোতে হবে। যদি কখনো একদিন আপনার খুব নাম হয়, যদি আপনি কোনোদিন এমন কিছু লেখেন যা গোটা দেশ পড়বে, একটি অনুচ্ছেদ রাখবেন আমার জন্য। শুধু আপনি আর আমি বুঝব সেটা।
তারপর আর কোনো চিঠি এল না। কোনো উত্তর নয়। কোনো বিদায় নয়।শুধু এক অজস্র প্রশ্ন ফেলে সে হারিয়ে গেল।
বছরের পর বছর কেটে গেছে। আমি এখন পরিচিত একজন। আমার বই বিক্রি হয়। সাহিত্য উৎসবে আমাকে ডাকা হয়। ইন্টারভিউয়ে বারবার শোনা যায় এক প্রশ্ন, আপনার লেখাগুলো এত ব্যক্তিগত কেন ? আপনি কি কারও উদ্দেশে করে লিখেন ?
আমি কেবল হেসে বলি, হয়তো! কোনো এক হারিয়ে যাওয়া পাঠিকাকে।
তবে কোনোদিন তার নাম বলি নি। কারণ সে যে তার শেষ চিঠিতে বলেছিল, আপনি আর আমি ছাড়া কেউ জানবে না।
সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেই একদিন লিখলাম একটি বই। নাম ছিল ‘ছিন্ন মায়া’। গল্প নয়, যেন এক দীর্ঘশ্বাসের নোটবুক।
সেই বইয়ের একদম শেষ লাইনে লিখেছিলাম ছোট করে। আর্দ্রভাবে। প্রতিটি শব্দ মেপে।
যদি এই বইয়ের শেষ লাইনটা কখনো তোমার চোখে পড়ে, জেনে নিয়ো, এখনো আমি চিঠির প্রতিটা অক্ষর গুনে যাই। কেবল তোমার জন্য।
জানি না সায়রা এখন কোথায়। হয়তো কারও স্ত্রী, কারও মা। হয়তো সন্ধ্যায় ছাদে বসে পুরোনো বইয়ের পাতায় শুকনো গোলাপ খোঁজে। হয়তো বইয়ের সেই শেষ লাইনটা কখনো তার চোখে পড়ে নি। আবার হয়তো চোখে পড়েছে। সে কি এখনো মনে রেখেছে ?
কিন্তু আমি জানি হয়তো প্রতিটি লেখক জীবনে একবার এমন একজন পাঠিকা পায়। যার উপস্থিতি লেখার কালি হয়ে যায়, আর অনুপস্থিতি হয় ‘অমরত্ব’!
বছর কয়েক পর, এক বিকেলে অফিস থেকে ফিরে একলা বসে ছিলাম, মনের মধ্যে এক অজানা শূন্যতা। আমার হাতে এক বর্ণহীন, সাদা খাম এলোমেলোভাবে ধরা ছিল। খোলার আগেই জানলাম, সেটি সেই হারিয়ে যাওয়া পাঠিকা থেকে এসেছে। কাঁপা হাতে খুললাম।
অদ্ভুতভাবে সেখানে লেখা ছিল :
চলে যাওয়া বললে ভুল হবে। আমি আসলে কখনোই ফিরি নি। শুধু সময়ের এক গোপন গলিপথে, ছিন্ন পাতার মতো নিজেকে সঁপে দিয়েছিলাম হারিয়ে যাওয়া দিনে। আপনার ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে ছিল আমার অনুভূতির ছায়াও; অলক্ষে, অব্যক্তে।
সেদিনের সেই রক্তলাল চুড়িগুলো কি মনে আছে ? আমি পাঠিয়েছিলাম। কাচের নয়, রেশমে মোড়া লজ্জা ছিল তাতে। তার সঙ্গে একটা চিঠি যার অক্ষরে অক্ষরে লেখা ভালোবাসার নীরব উচ্চারণ। আপনি কি কখনো খুঁজে দেখেছেন সেই অক্ষরগুলোয় আপনার নিজের প্রতিচ্ছবি ?
আমরা কখনো দেখা করি নি। কিন্তু যখন পুরোনো শহরের ধুলোবালির নিচে কারও নরম পদচিহ্ন পড়ে থাকে, জানবেন সেটা আমার ছিল। আমি আপনার গল্পে নেই, কিন্তু প্রতিটা লাইনের তলায়, আমি আপনাকে ছুঁয়ে থাকি। আপনার গদ্যের বিষণ্নতা, ছড়ার অন্ধকার, নীরব বিরামচিহ্নে; সবখানে আমি আছি।
আপনি লেখেন, আমি পড়ি। কিন্তু এই পাঠকের হৃদয়ে আপনি কেবল লেখক নন, আপনি আমার প্রার্থনার অপরাধ। একদিন যদি ভুল করে বা ইচ্ছেতে, আমার নামে কোনো চিঠি লেখেন; জেনে রাখবেন, আমি সেই শব্দের প্রতীক্ষায়, এক জীবনের ঘোর ভাঙার মতো করে বসে থাকব।
আমি হারিয়ে যাই নি, আমি শুধু আপনার লেখার পাতায় আশ্রয় নিয়েছি।
আপনার পাঠিকা,
সায়রা।
চিঠি পড়ে চোখ ভিজে গেল। হাজারো প্রশ্ন ঘুরে বেড়াল আমার মনে, কোথায় ছিল সে এতদিন ? কী করছিল ? কেন এতকাল চিঠি লেখা বন্ধ করেছিল ?
আমি দ্রুত তার চিঠির ঠিকানায় ফোন দিলাম, কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া গেল না।
তারপর কেটে গেল কত বছর! বছর যায়, বছর আসে। কিন্তু আর কোনো চিঠি আসে না।
ফেব্রুয়ারির কোনো বইমেলার স্টেজে আমি বসেছিলাম অটোগ্রাফ সেশনে। ভিড় ছিল উপচে পড়া। একটার পর একটা বই এগিয়ে আসছিল, নাম লিখছিলাম, মুচকি হেসে দিচ্ছিলাম সই। প্রকাশকের খুশি মুখ, পাঠকের উচ্ছ্বাস। সবকিছুই যেন নিখুঁত ছিল সেই দিন।
হঠাৎ একটা মুহূর্তে আমার কলমটা থেমে গেল।
সামনে এগিয়ে আসা বইয়ের নিচে ছিল একজোড়া কাঁপা হাত।
শিরা-উদ্গত, বয়সে জীর্ণ। কিন্তু যা আমার দৃষ্টি আটকে দিল, সেটা ছিল সেই লাল রেশমি চুড়ি।
চোখ আটকে গেল চুড়ির দিকে। চোখের পেছনে যেন একটা পর্দা নামল।
স্মৃতির ঘরে সেই বিকেলটা আবার জেগে উঠল, যেদিন পোস্টম্যান এনে দিয়েছিল একজোড়া রক্তলাল চুড়ি আর গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ভালোবাসার চিঠি।
আমি চোখ তুলে তাকালাম।
ভিড়ের ভেতর থেকে মুখটা স্পষ্ট হচ্ছিল ধীরে ধীরে।
একটা পরিপক্ব মুখ, চুলে সাদা রেখা, চোখের কোণে ম্লান ক্লান্তি কিন্তু চাহনিতে সেই অদ্ভুত পরিচিত কাঁপুনি, যা বহুবছর আগে এঁকেছিলাম আমার কল্পনায়।
আমরা দুজনই চুপ। কারোর ঠোঁট না কাঁপল, না কোনো শব্দ উচ্চারিত হলো।
কেউ কিছু বললাম না। শুধু চেয়ে থাকলাম একে অপরের দিকে।
তার চোখে কি একটুকরো অভিমান ছিল ? না তৃপ্তি ? আমার মনে হঠাৎ তীব্র একটা মোচড় দিয়ে উঠল।
হয়তো এটা শুধু কাকতালীয় নয়।
হয়তো এই সেই পাঠিকা!
হয়তো সে চিনেছে আমাকে।
আমিও হয়তো চিনতে পারতাম। সে কি লাল রেশমি চুড়ি দিয়ে কোনো ইঙ্গিত দিতে চাইছিল ? নাকি আমার ভ্রান্ত ধারণা ?
কিন্তু কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। কেউ কোনো নাম নেয় নি। শুধু সে বইটা এগিয়ে দিল, আমি সই করে ফিরিয়ে দিলাম।
আমরা দুজনেই জানতাম এটা শেষ নয়। শুধু চিঠির বাইরের একটা নীরবতা।
কেউ বুঝল না চারপাশে কী হলো। কিন্তু একটা অদৃশ্য গল্পের শেষ পৃষ্ঠা যেন ভাঁজ হয়ে গেল বইয়ের ভেতর।
কোনো এক বইয়ের শেষ লাইনে লিখলাম চুপিচুপি,
আজও তোমার পাঠানো চুড়ির রঙ আমার কলমের কালি হয়ে থাকে। তুমি যদি চিনে থাকো, তাহলে বলবো আমি কোনোদিন ভুলি নি।
আমিও জানালাম, লেখালেখি আমার নিঃশ্বাস, আর সে ছিল সেই নিঃশ্বাসের মধ্যে পলাতক জীবন।
তারপর হঠাৎ একদিন দেখলাম সেই প্রবীণা আমার দোরের সামনে বসে। আমি প্রায় ছুটে গেলাম। কিছুক্ষণ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। নীরবতা যেন ভারী হয়ে আসছিল। নীরবতার জাল ভেঙে সে আমাকে শুধাল, কেমন আছেন ? চিনতে পেরেছেন ?
তারপর আমাদের আলাপ আলোচনায় জানা গেল, সে প্রায়শই সময় পেত না চিঠি লিখতে। জীবন তাকে অন্য পথে ডেকেছিল। কিন্তু তার মনের ভেতর সেই সংলাপ থেমে থাকে নি।
আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, যেখানে হয়তো জীবনের বাস্তবতা ছাপিয়ে যেতে পারব না, সেখানে আমাদের গল্প হবে চিরন্তন স্রোত।
আমাদের জীবনের ছিন্ন মায়ার চিঠি হয়ে উঠল একটি সাহিত্যের সুর। সে চিঠির মায়ায় রচনা করলাম নতুন কবিতা, নতুন গল্প, যেখানে ছিল ‘সায়রা’ ও ‘আমি’ অদৃশ্য কিন্তু স্পর্শযোগ্য। কিন্তু তাকে স্পর্শ করার অধিকার আমার ছিল না। বাস্তবতা তো আরও কঠিন।
না, তারপর আমাদের আর দেখা হয় নি। সেটাই আমাদের দ্বিতীয় এবং শেষ দেখা ছিল। তার সেই পুরোনো ঠিকানায় একটা চিঠি পাঠিয়েছিলাম: কেমন আছো সায়রা ? ?
কিন্তু কোনো জবাব আসে নি। হয়তো সেটাই আমাদের শেষ পত্রালাপ ছিল।
আমি এখনো মাঝে মাঝে বসে থাকি সেই পুরোনো লাইব্রেরির পাশের বাসায়, হাতে একটি কলম আর চিরকালের মতো কিছু লেখা রেখে। মাঝে মাঝে আমার চোখ আমার দোরের সামনে কোনো প্রবীণাকে খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু খুঁজে পায় না।
আমার লেখকজীবনে প্রাণের সঞ্চারিণী ছিল সেই প্রবীণা, তবে তখন সে প্রবীণা ছিল না। তার যৌবন হয়তো তখন ঝলমল করত। মুখে চাপা হাসি আর কাজলকালো চোখ, হাতভর্তি লাল রেশমি চুড়ি। সে আর কেউ নয় আমার ‘সায়রা’; সেই পাঠিকা।
তার অনুপস্থিতি আমার কাগজের ওপর অমর হয়ে আছে। শুধু চিঠির শব্দগুলোয় নয়, বরং ছিন্ন মায়ার মধ্যে গোপন থাকা বেদনায়।
আমার শেষ চিঠি আজও অপেক্ষা করে তার উত্তরের।
যেখানে বাকি গল্প লেখা হয় নি, সেখানে আমাদের সম্পর্কের পাতা অমীমাংসিত থেকে গেছে। মাঝে মাঝে তাকে চিঠি লিখতাম যেগুলো কখনো তাকে পাঠানো হয় নি।
সেরকম আবার লিখলাম এক বর্ষণমুখী শ্রাবণের বিকেলে,
সায়রা,
জানি না তুমি কোথায় আছো, কিন্তু আমার অন্তরের গভীরে তুমি আজও জ্বলজ্বল করে আছো।
আমাদের ছিন্ন মায়ার চিঠি আজও আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অধ্যায়।
এটাই আমার সবচেয়ে ব্যক্তিগত কথা, যেটা তোমার জন্যই লেখা। তোমার প্রতি আমার অনুভূতি কখনো প্রকাশ করি নি। আজও পারলাম কি না জানি না। তবে তোমার মনে কী ছিল সেটা অজানা!
ইতি
মুহিব সালসাবিল
[‘অন্যপ্রকাশ লাখ পেরিয়ে উদ্যাপন’ গল্পলেখা প্রতিযোগিতায় ১০জন গল্পকার বিজয়ী হয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন মাহমুদা গাজী। তার গল্পটি পত্রস্থ হলো।—বি.স]
Leave a Reply
Your identity will not be published.