চলচ্চিত্রে বন্ধুত্ব

চলচ্চিত্রে বন্ধুত্ব

চলচ্চিত্রের একটি কমন বিষয় হচ্ছে, প্রেম-ভালোবাসা। এটি সব দেশের চলচ্চিত্রেই দেখা যায়। দেখা যায়, বাবা-মা, ভাই-বোনসহ নানা ধরনের সম্পর্ক। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, বন্ধুত্ব। এটিও বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্রে মূর্ত হয়ে উঠেছে।

প্রথমেই পশ্চিমবঙ্গের বাংলা চলচ্চিত্রের কথা। সত্যজিৎ রায়ের ‘ঘরে বাইরে’-তে সন্দীপ ও নিখিলেশের বন্ধুত্ব লক্ষণীয়। স্ত্রীর সঙ্গে সন্দীপের অনৈতিক সম্পর্ক টের পেয়েও বন্ধুকে কিছু বলে না নিখিলেশ। বরং তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নানাভাবে সাহায্য করে। সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘গুপি বাঘা ফিরে এল’-তে দেখা যায় গুপি-বাঘার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। ‘অপুর সংসার’-এ বন্ধু টুলুর সূত্রে অপর্ণার সঙ্গে বিয়ে হয় অপুর। অকালে স্ত্রীকে হারিয়ে অপু যখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, তখন টুলুই সান্ত্বনা জোগায় বন্ধুকে। সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’-তে দেখা যায় ভাইবোনের মধ্যে বন্ধুত্ব। অপু ও দুর্গার বৃষ্টিতে ভেজা, রেলগাড়ি দেখতে যাওয়া, অন্যের গাছ থেকে ফল পেড়ে খাওয়া, মিঠাইওয়ালার পিছু পিছু যাওয়া—সবকিছুতেই এই বন্ধুত্ব মূর্ত হয়ে উঠেছে। বন্ধুর একটি গুণ হলো, গোপন রাখা। অপুও তার দিদির হার চুরির বিষয়টি গোপন রাখে। দুর্গার মৃত্যুর পর অপু সেই হারটি জলাশয়ে ফেলে দেয়। কচুরিপানার আবর্তে তা ঢাকা পড়ে।

গত শতকের পঞ্চাশ দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত চিত্রা বসু পরিচালিত ‘বন্ধু’ সিনেমাটিও উল্লেখযোগ্য। এখানে দেখা যায়, শান্ত (অসিতবরণ)-র বাবার মৃত্যুর পর তার পরিবার নিরাশ্রয় হয়ে পড়লে আশ্রয় জোটে শান্তর বন্ধু দীপুদের (উত্তমকুমার) বাড়িতে। ফলে শান্ত ও দীপু, দুই বন্ধু, একসঙ্গে বড় হয়ে ওঠে। তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে বন্ধুত্বের এক অদ্ভুত বন্ধন, যা সচরাচর দেখা যায় না। এক সময় চাকরির ইন্টারভিউ দিতে দুই বন্ধু কলকাতায় যায়। সেখানে একজন ধনী লোক (জহর গাঙ্গুলী) এবং তার মেয়ে সুজাতা (মালা সিনহা)-র সঙ্গে পরিচয় হয় শান্ত ও দীপুর। অতঃপর বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে একটি ত্রিভুজ প্রেম কাহিনি ডালপালা মেলতে থাকে। এখানেও শেষ পর্যন্ত বন্ধুত্বেরই জয় হয়।

অনীক দত্তের সিনেমা ‘বরুণবাবুর বন্ধু’। এখানে বরুণবাবু একজন বয়স্ক মানুষ, যিনি যৌবনে বামধারার আদর্শবান রাজনীতিবিদ ছিলেন। কখনো আপস করেন নি। এজন্য তিনি তার সহকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এই বরুণবাবুর কৈশোর এবং যৌবনের বন্ধু—ভারতের রাষ্ট্রপতি—তিনি বরুণবাবুর সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। এটি নিয়েই ঘুরপাক খায় সিনেমাটির কাহিনি। ছবিতে বরুণবাবুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

মঙ্গল চক্রবর্তী পরিচালিত ‘আমি সে ও  সখা’। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় উপন্যাস অবলম্বনে এই ছবিটি নির্মিত। এখানে দুই বন্ধুর বন্ধুত্ব দেখানো হয়েছে। দ্জুনেই ডাক্তার। ঘটনাচক্রে দুজন একই নারীর (কাবেরী বসু) প্রেমে পড়ে। কিন্তু এক বন্ধু (উত্তমকুমার) যখন জানতে পারে যে, তার বন্ধুও (অনিল চট্টোপাধ্যায়) মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছে, তখন সে তাদের পথ থেকে সরে দাঁড়ায়। তাদের বিয়েতে সহযোগিতা করে। পরে দুই বন্ধু বিলেতফেরত হয়ে দেশে ফিরে এসে একসঙ্গে একটি নার্সিংহোম গড়ে তোলে। সেখানে এক বন্ধু (অনিল) অর্থের প্রতি লোলুপ হয়ে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ জানতে পারায় সমস্ত কিছুর দায় নিজের কাঁধে নিয়ে জেলে বন্দি জীবন কাটায় অন্য বন্ধুটি (উত্তমকুমার)। বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা এবং আত্মত্যাগই এই ছবির উপজীব্য।

সাম্প্রতিক একটি চলচ্চিত্র, রাশেদ রাহা’র ‘কলকাতা ডায়েরিজ’। চলচ্চিত্রটিতে অ্যানামিকা নামের এক নারীর জীবনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে, যিনি তার অতীত দ্বারা তাড়িত হন। তার বন্ধু শর্মি ও পিকে তাকে সমর্থন করে। কিন্তু তাদের বন্ধুত্ব পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, যখন নারীটির স্বামী ফিরে আসে। তিনটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্রীলেখা মিত্র, দর্শনা বণিক এবং বাংলাদেশের সিফাত আমিন শুভ।

এবার বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গ। সাদেক খান পরিচালিত ‘নদী ও নারী’-তে নজু মিয়া ও আসগরের গভীর বন্ধুত্বে¡ চির ধরে এক নারীর জন্য। এক বন্ধু আরেক বন্ধুর শত্রু হয়ে ওঠে। এর অবসান ঘটে নজু মিয়ার মৃত্যুতে। আলমগীর কবিরের ‘ধীরে বহে মেঘনা’-তে সুমিত ও অনিতার বন্ধুত্বের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব প্রতীকীভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। কাজী জহিরের ‘অবুঝ মন’ ছবিতে আমরা দেখতে পাই, বন্ধুত্বের জন্য মাসুম অর্থাৎ রাজ্জাক প্রেম ও একটি চোখের আলো বিসর্জন দিচ্ছে।

এখানে বাংলাদেশের এমনই কয়েকটি ছবির কথা বলো হলো।

রাজ্জাক ও উজ্জলের বন্ধুত্বের ছবি ‘বন্ধু’ নির্মাণ করেন দিলীপ বিশ্বাস। জমিদারপুত্রের চরিত্রে অভিনয় করেন উজ্জল, দাসীর ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেন নায়করাজ রাজ্জাক। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের চিত্রনাট্যে ছবিতে দেখানো হয় শ্রেণিবৈষম্যের কাঁটা পেরিয়ে বন্ধুত্ব জয়ের গল্প। ‘বন্ধু তোর বারাত নিয়া আমি যাব’—সুবীর নন্দীর গাওয়া এই গান এখনো অনেকের মুখে মুখে ফেরে।

সৈয়দ শামসুল হকের গল্পে কিশোর অপরাধ নিয়ে দেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘পুরস্কার’। সি বি জামানের পরিচালনায় ছবিতে ফুটে ওঠে বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত কিশোরদের জীবনযাপন ও তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বের গল্প।

মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস অবলম্বনে মোরশেদুল ইসলামের ছবি ‘দীপু নাম্বার টু’। ছবিতে দেখা যায়, মা-বাবার বিচ্ছেদের পর বাবার সঙ্গে থাকে দীপু। বাবার খেয়ালি মন আর চাকরির জন্য প্রায়ই নতুন স্কুলে ভর্তি হতে হয় দীপুকে। নতুন স্কুলে দীপুর পরিচয় হয় তারিকের সঙ্গে, মারামারি আর অকারণ ঝগড়া করা যার স্বভাব। ঘটনাচক্রে দীপু আর তারিক হয়ে ওঠে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এই জুটি পরাজিত করে দেশদ্রোহী এক ডাকাতদলকে। দীপু চরিত্রে অভিনয় করে সেরা শিশুশিল্পীর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল অরুণ সাহা।

ঢাকা শহরের একদল অবিবাহিত বন্ধুর দৈনন্দিন জীবনযাত্রার টানাপড়েনের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘ব্যাচেলর’। আনিসুল হকের রচনায় এটি নির্মাণ করেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ব্যাচেলরদের প্রত্যেকের রয়েছে আলাদা আলাদা গল্প। দিন শেষে নিজেদের সব মান-অভিমান ভুলে আবার তারা একত্রিত হয়, আড্ডায় মেতে ওঠে। বিভিন্ন বয়সী বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেন হুমায়ুন ফরীদি, ফেরদৌস, আহমেদ রুবেল, হাসান মাসুদ, আরমান পারভেজ মুরাদ ও মারজুক রাসেল।

হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে তৌকীর আহমেদের ছবি ‘দারুচিনি দ্বীপ’। তারুণ্যের জয়গান, ভালোবাসা, পারিবারিক সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যেও ছবিতে ফুটে উঠেছে বন্ধুত্ব। রিয়াজ, জাকিয়া বারী মম, মোশাররফ করিম, বিন্দু, মামনুন ইমন, মুনমুনসহ অনেক তারকাসমৃদ্ধ ছবিটি অনেকের প্রিয়। এছাড়া ‘সমাধি’, ‘বন্ধু’, ‘সূর্যকন্যা’, ‘বাল্যবন্ধু’ ‘দোস্ত দুশমন’, ‘জিঞ্জির’, ‘ভাইবন্ধু’, ‘বন্ধু আমার’, ‘লালুভুলু’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘অভিযান’, ‘জাগো’সহ নানা ছবিতে বন্ধুত্ব¡ মূর্ত হয়ে উঠেছে।

এবার বলিউডের হিন্দি ছবির প্রসঙ্গ। মেহবুব খানের ‘আন্দাজ’ এবং রাজকাপুরের ‘সঙ্গম’-এ দেখা যায় এক ছেলে ও মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব, পরে যা ত্রিভুজ প্রেমে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘দোস্তি’সহ আরও বহু ছবিতে বন্ধুত্বের দ্যুতি সেলুলয়েডে ফুটে উঠেছে। এখানে বলিউডের এমনই কয়েকটি ছবির কথা উল্লেখ করা হলো।

‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’ ছবিতে অভিনয় করেছেন ফারহান আখতার, অভয় দেওল, হৃত্বিক রোশন, ক্যাটরিনা কাইফ, কালকি কোয়েচিন সহ অনেকে। নির্মাতা জয়া আখতার। অর্জুন, ইমরান ও কবির নামের তিন বন্ধুর গল্প নিয়ে এই ছবির কাহিনি। বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সময়ই জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় তা দেখানো হয়েছে সিনেমাটিতে। 

একদল বন্ধুর একাত্মতা, দেশপ্রেম এবং একই সঙ্গে বন্ধুত্ব দেখানো হয়েছে ‘রঙ দে বাসন্তি’ সিনেমায়। একদল বন্ধু তাদের দেশের জন্য লড়াই করে গেছে এবং বন্ধুদের জন্য একের পর এক আত্মত্যাগ করে গেছে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা। অভিনয় করেছেন আমির খান, শারমান জোশি, আর মাধবন, সোহা আলি খানসহ অনেকে।

সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’-এ দেখা যায়, দুই বন্ধু খুঁজে বেড়ায় তাদের কলেজের এক বন্ধুকে, যে নিজের ভাবনা দিয়ে বদলে দিয়েছে চারপাশের মানুষের জীবন। যদিও তাকে সবাই এক কথায় ‘ইডিয়ট’ বলে, তবুও বন্ধুত্বের টানে তার কাছে ছুটে যায় বাকি দুই বন্ধু। রাজকুমার হিরানি পরিচালিত এ ছবিতে অভিনয় করেছেন আমির খান, মাধবান, শারমান জোশি, কারিনা কাপুর খানসহ অনেকে। 

আরেকটি সিনেমা ‘দিল চাহতা হ্যায়’। সেই শৈশব থেকে তিন বন্ধুর বন্ধুত্ব—কিন্তু তিন জন তিন ধরনের। এই তিনজনের মধ্যে অন্য কিছু কখনোই প্রাধান্য পায় না—কিন্তু ভালোবাসা বদলে দেয় তাদের জীবন। প্রেমের কারণেই আলাদা হয় তারা, প্রেমের কারণেই ফিরে আসে অকৃত্রিম বন্ধুত্বের টানে। ফারহান আখতারের পরিচালনায় ছবিতে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আমির খান, সাইফ আলী খান, অক্ষয় খান্না, ডিম্পল কাপাডিয়া, সোনালি কুলকার্নি ও প্রীতি জিনতা।

বন্ধুদের সঙ্গে পুনর্মিলন ফিরিয়ে দিতে পারে জীবনের স্বাদ, বেঁচে থাকার সাধ—‘রক অন’ সিনেমাটি দেখলে এমন অনুভূতিই হবে। অভিষেক কাপুর পরিচালিত এ ছবিতে অভিনয় করেছেন ফারহান আখতার, অর্জুন রামপাল, ল্যুক কেনি, পুরাব কোহলি—যারা একটা সময় একত্রিত হয় তাদের বন্ধুত্বের টানে। সিনেমাটিতে সংগীত নিয়ে একদল বন্ধুর টানাপোড়েন এবং শেষ পর্যায়ে আবার তাদের মিলনকে তুলে ধরা হয়েছে।

‘শোলে’ ছবির পরিচালক রমেশ সিপ্পি। বন্ধুত্বের আসল সংজ্ঞা প্রকাশ পেয়েছে এ সিনেমায়। জয় এবং ভীরু দুই বন্ধুর কাহিনি উঠে এসেছে এতে। এই দুই চরিত্রে অভিনয় করেন অমিতাভ এবং ধর্মেন্দ্র। সিনেমাটির ‘ইয়ে দোস্তি হাম নেহি ছোড়েঙ্গে’ গানটি বন্ধুদের আড্ডাতে এখনো বেশ জনপ্রিয়।

প্রকৃত বন্ধুত্ব বলতে যা বোঝায় তা দেখানো হয়েছে ‘দোস্তি’ সিনেমায়। দুই বন্ধু যাদের একজন অন্ধ এবং অন্যজন খোঁড়া। একে অপরের সহযোগী হয়ে তারা চলতে থাকে নিষ্ঠুর এবং স্বার্থপর এ পৃথিবীতে। জীবনের চলার পথে অনেক বাধার সম্মুখীন হলেও শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে বন্ধুত্ব। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন সুশীল কুমার এবং সুধির কুমার। 

‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’ সিনেমাটির কাহিনি গড়ে উঠেছে বন্ধুত্ব নিয়ে। সিনেমাটিতে দেখা যায় রাহুল এবং অঞ্জলির অসাধারণ বন্ধুত্ব। বন্ধুর জন্য নিজের সুখ এবং ভালোবাসা ত্যাগ ছিল সিনেমার মূল উপজীব্য। সিনেমাটিতে রাহুল চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরুখ এবং অঞ্জলি চরিত্রে দেখা যায় কাজলকে। এছাড়াও করণ জোহর পরিচালিত এই ছবিতে অভিনয় করেছেন রানি মুখার্জি, অনুপম খের, সানা খান ও ফরিদা জালাল।

একদল বন্ধুর গল্প ‘জানে তু ইয়া জানে না’ সিনেমাটি। এদের মধ্যে অদিতি এবং জয়ের বন্ধুত্ব একটু আলাদা। তারা দুজন জানে কীভাবে একে অপরের মুখে হাসি ফোটানো যায়। তবে অন্যরাও কম নয়। একে অপরের সুখ-দুঃখে সব সময় পাশে তারা। এমনকি বন্ধুত্বের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। কিন্তু এক পর্যায়ে গিয়ে অদিতি এক ছেলের এবং জয় অন্য এক মেয়ের প্রেমে পড়ে এরপর তারা একে অপরের থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। কিন্তু তারপরেই বুঝতে পারে একে অপরকে ভালোবাসে তারা। ইমরান খান ও জেনেলিয়া ডি’ সুজা, দুজনেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন এই ছবির মাধ্যমে।

হলিউডের সিনেমায় মাঝে শুধু অ্যাকশন নয়, মানবিক ব্যাপার-স্যাপার ফুটে ওঠে। যেমন, বন্ধুত্ব। এমনই কয়েকটি ছবির কথা এখানে বলা হলো।

১৯৮২ সালে মুক্তি পায় ‘ইটি দ্য এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল’ শিরোনামের সায়েন্স ফিকশন ছবিটি। পৃথিবীতে হারিয়ে যাওয়া একটি এলিয়েনকে নিজ গ্রহে ফিরিয়ে দেয় একটি কিশোর ছেলে। স্টিভেন স্পিলবার্গের পরিচালনায় এ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছেন হেনরি থমাস ও ড্রিউ ব্যারিমুর।

১৯৫০ সালে আয়ারল্যান্ডের পটভূমিতে দুই বন্ধু বেনি হোগান ও তার বন্ধু ইভ মেলোনকে নিয়ে পরিচালক প্যাট ও’কনর নির্মাণ করেছেন ‘সার্কেল অব ফ্রেন্ড’। অভিনয় করেছেন ক্রিশ ও’ডনেল, মিনি ড্রাইভার, গারালডাইন ও’রয় প্রমুখ।

‘ব্রিজ অব টেরাবিথিয়া’ ছবিটি শুধু বন্ধুত্বের নয়—স্বপ্ন এবং বাস্তবায়নের। স্কুলে নতুন এক মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বের কারণে একটি কিশোরের জীবন বদলে যায়। বাস্তবতা থেকে দূরে পালাতে তারা নির্মাণ করে স্বপ্নের এক জগৎ। বন্ধুত্বের সম্মানে একদিন ঠিকই ধরা দেয় সেই অধরা পৃথিবী। গ্যাবোর কাসপো পরিচালিত এ ছবিতে অভিনয় করেছেন যশ হ্যাচারসন, অ্যানাসোফিয়া রব, রবার্ট প্যাট্রিক প্রমুখ।

রব রেইনারের পরিচালনায় ‘স্ট্যান্ড বাই মি’ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৮৬ সালে। অভিনয় করেছেন উইল হুইটন, রিভার ফনিস্ক, জেরি ও’কনেল প্রমুখ। দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই, এমন এক বন্ধুর মৃত্যুসংবাদে বদলে যায় এক যুবকের জীবন। মৃতদেহ শনাক্ত করতে ঘুরে আসে নিজের ছেলেবেলা।  

‘রোমিও অ্যান্ড মিশেলস হাই স্কুল রিইউনিয়ন’ সিনেমায় দেখা যায়, দীর্ঘ ১০ বছর পর স্কুলের পূনর্মিলনীতে দেখা হয় দুই বন্ধুর—একে অন্যের ঠিক উল্টো। কিন্তু অন্যসব ক্লাসমেটদের সঙ্গে একের পর এক মিথ্যা বলতে থাকে তারা। ডেভিড মিরকিন পরিচালিত এ ছবিতে অভিনয় করেছেন মিরা সরভিনো, লিসা কুড্রো প্রমুখ। 

২০০৫ সালে মুক্তি পায় বন্ধুত্ব নির্ভর হলিউড ছবি ‘দ্য সিস্টারহুড অব দ্য ট্রাভেলিং প্যান্টস’। পেশাগত জীবন কিংবা সংসারের কারণে বন্ধুত্ব নষ্ট হতে পারে, এমন ধারণা থেকেই চারটি মেয়ে জিন্স প্যান্ট একে অন্যের সঙ্গে বদলে নেয়। কেন কপিস পরিচালিত এ ছবিটি দেখলে জানা যাবে বাস্তবতা তাদের এই নির্মল বন্ধুত্ব নিয়মিত করে কিনা। এতে অভিনয় করেছেন অ্যাম্বার টম্বলিন, অ্যালেক্সিস ব্লেডেল, আমেরিকা ফেরেরা ও ব্লেক লাইভলি।

২০০১ থেকে শুরু, আর ২০১১ তে এসে সমাপ্তি—মাঝের ১০টি বছরে নির্মিত ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের সিনেমাগুলো হ্যারি, রন এবং হারমায়োনির অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্বের নিদর্শন হয়ে রয়ে গেছে। জে.কে রাওলিং-এর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের প্রত্যেকটি সিনেমাই যেন চরিত্রগুলোর বন্ধুত্বের সম্পর্কটাকে করে তুলেছে আগের চেয়ে আরও বেশি জোরালো। হ্যারি পটার, রন উইসলি এবং হারমায়োনি গ্রেঞ্জার—তিন হগওয়ার্টস পড়ুয়া বন্ধু সব সময় এক সঙ্গে লড়ে গেছে অশুভ শক্তির বিপক্ষে। ডার্ক লর্ড ভোল্ডেমর্টের হাত থেকে রেহাই পাওয়া বিস্ময় বালক হ্যারি তার বন্ধুদের স্বার্থে নিজেকে প্রতিবার দাঁড় করিয়েছে মৃত্যুর মুখে, তবে কম যায় নি বাকি দুইজনের কেউই।

‘ফ্রাইড গ্রিন টমোটোস’ ছবিতে দেখা যায়, নিজের জীবন ও সংসার নিয়ে বিরক্ত এক নারীর বন্ধুত্ব হয় নার্সিং হোমের প্রবীণ এক নারীর সঙ্গে। ধীরে ধীরে নার্সিং হোমের অনেকের কাছ থেকেই অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ নিয়ে তিনি পরিপূর্ণ করেন নিজের জীবন। জন অ্যাভান্টের পরিচালনায় ছবিতে অভিনয় করেছেন ক্যাথি বেটস্, জেসিকা টেন্ডি, ম্যারি স্টুয়ার্ট মাস্টারসন, ম্যারি লুইস পার্কার প্রমুখ।

এছাড়া ‘ডাম্ব অ্যান্ড ডাম্বার’, ‘দ্য ফার্স্ট ওয়াইভস্ ক্লাব’, ‘মাই গার্ল’, ‘ফ্রি উইলি’, ‘ থেলমা অ্যান্ড লুইস’, ‘দ্য সিক্রেট গার্ডেন’-সহ হলিউডের বিভিন্ন সিনেমায় ফুটে উঠেছে বন্ধুত্ব।

Leave a Reply

Your identity will not be published.