নীল ধ্রুবতারা (পর্ব ২৮)

নীল ধ্রুবতারা (পর্ব ২৮)

[এই পত্রোপন্যাসটি মূলত দুজন মানুষের গল্প। ফাহিম আর সিমির। একজন থাকে আমেরিকায়, অন্যজন বাংলাদেশে। একটা অনাকাঙ্খিত ই-মেইলের কারণে দুজনের পরিচয় হয়েছিল। ভুল থেকে পরিচয়, তারপর বন্ধুত্ব, তারপর বিচ্ছেদ। এর মাঝে ই-মেইলে দুজন অসংখ্য পত্র আদান-প্রদান করেছে। সেইসব পত্রে দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি, পছন্দ-অপছন্দ, মনস্তত্ত্ব— সবই ফুটে উঠেছে। আজ পড়ুন ২৮ ও ২৯তম পর্ব।]

প্রথম পর্ব  দ্বিতীয় পর্ব  তৃতীয় পর্ব চতুর্থ পর্ব পঞ্চম পর্ব 
ষষ্ঠ পর্ব সপ্তম পর্ব অষ্টম পর্ব নবম পর্ব দশম পর্ব পর্ব ১১ পর্ব ১২  পর্ব ১৩ পর্ব ১৪ পর্ব ১৫ পর্ব
১৬
 পর্ব ১৭ পর্ব ১৮ পর্ব ১৯ পর্ব ২০ পর্ব ২১ পর্ব ২২ ও ২৩ পর্ব ২৪ ও ২৫ পর্ব ২৬ ও ২৭

অফিসের কাজে সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যে কাটল ফাহিমের।

যদিও ক্ষণে ক্ষণে সিমির ইমেইল তাকে ভাবাল অনেক। দীর্ঘদিন পর ওর ইমেইল পেয়ে কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিল সে। সিমির দীর্ঘ ইমেইলটি বেশ কয়েকবার পড়েছে ফাহিম। ক্রিসের প্রতি সিমির অদ্ভূত আসক্তি দেখে ভীষণ অবাক হয়েছে ওসঙ্গে খানিকটা ঈর্ষাও হলো তার। যদিও বন্ধুত্বে কোনোরকম ঈর্ষা হওয়ার কথা নয়—উচিতও নয়। তবুও, ক্রিসকে হিংসে করতে লাগল সে।

লাঞ্চ ব্রেক একবার ভেবেছিল উত্তর লিখবে। অবশেষে কাজের শেষে বাসায় যাবার পূর্বে ফাহিম উত্তর লিখল।

প্রিয় বর্ষা,
অবশেষে তুমি লিখলে! দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান হলো। বুঝতে পারছি বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছে তোমাকে এই ইমেইলটি লিখতে গিয়ে। অনেক জোর করেই লিখতে হয়েছে তোমাকে। তুমি সময় বের করে লিখেছ, এ জন্য অবশ্যই তুমি প্রশংসার দাবীদার। ধন্যবাদ অসীম। ইদানীং তোমার ইমেইল পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম আমি। 

আমি ভালো আছি বর্ষা।

শিকাগোর আবহাওয়ার তেমন কোনো পরিবর্তন এখনো শুরু হয় নি। গত সপ্তাহে যে তুষারপাত হয়েছিল তা ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে। পার্থক্য শুধু এটুকুই। তাপমাত্রায় কিছুটা উষ্ণতা এসেছে। এবং আমার জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নারী দুজন তাঁদের জীবনের একমাত্র পুরুষ মানুষটির অভাবে বেশ বিপাকেই আছে। বিশেষ করে আমার কন্যা— কথা হলেই সে ভাঙা ভাঙা বাংলায় জানতে চায়, বাবা তুমি কবে আসবা?

অনেকদিন পর তুমি সত্যিই বেশ বড়সড় একটি ইমেইল লিখেছ আমায়। ধন্যবাদ আরেকবার। আমি জানি না, উত্তরে কী লিখব। স্বতস্ফূর্তভাবে যা মনে আসে লিখব। এখন অথবা পরে। আমার অন্তত তোমার মতো বাধ্যবাধকতা নেই।

তুমি আমাকে আবার সেইসাথে ক্রিসকে হারানোর ভয় পাচ্ছ। কেন? প্রথম কথা, তুমি চাইলেও ক্রিস কিছুতেই তোমাকে হারাতে চাইবে না। আর তুমি না চাইলে, আমাকেও হারাবে না। সে কথা তোমাকে আগেও বলেছি।

তোমার দীর্ঘ ইমেইলের প্রতি লাইনের উত্তর লিখতে গেলে একটা উপাখ্যান হয়ে যাবে। আমি বরং সংক্ষেপে কিছু কথা বলি। প্রথমেই প্রতিজ্ঞা করে নিই, চলো, পেছনের কথা পুরোপুরি ভুলে যাই। স্মৃতি থেকে মুছে ফেলি সেসব অনুভূতি যা আমাদের অনুশোচনায় তাড়িত করে। অপ্রীতিকর স্মৃতি মুছে ফেলাই তো ভালো। ভালো না?

রাশেদ এক বিশেষ সৃষ্টি ছিল তোমার জীবনে। মহান আল্লাহ তা’আলা তার জন্য বেশি সময় বরাদ্দ করেন নি। তাই খুব কম সময়েই ওকে তিনি ফিরিয়ে নিয়েছেন তার কাছে। তুমি যতই চেষ্টা করো না কেন, রাশেদের বিকল্প কাউকে খুঁজে পাবে না। এমনকি ওর কাছাকাছিও পাবে না কাউকে। সে চেষ্টা করাটা বোকামীরই সামিল হবে। কাজেই নতুন কেউ তোমার জীবনে এলে, তাকে রাশেদের সাথে তুলনা না করে, সে যেমন তাকে তার মতোই মেনে নাও। না হলে এ জীবনে কখনোই তোমার ‘কাপ অব টি’ উপভোগ করা হবে না।

তোমার বাকী জীবনের সঙ্গী হওয়ার ক্ষেত্রে ক্রিসের সম্ভাবনা কতটুকু তা একমাত্র তোমরা দুজনেই জানো। তবে রাশেদের বিকল্প হিসেবে আমি নিজেকে দেখবার ঝুঁকি কখনোই নিতে চাইব না। আমি তোমার বয়ফ্রেন্ডও হতে চাই না। কারণটা বলি। হাজবেন্ডের সাথে ডিভোর্সের ঝুঁকি থেকে যায়। বয়ফ্রেন্ড হলে ব্রেকআপ। বেষ্টফ্রেন্ডের সাথে সে ঝুকি থাকে না। আমি বরং তোমার বেস্টফ্রেন্ড হয়েই থাকতে চাই।

আমি কিন্তু ভীষণ রেগে আছি তোমার ওপর। এবং খুব মনঃক্ষুণ্ন ও মর্মাহত হয়েছি। আমি ইচ্ছে করলে তোমার জীবন থেকে সরে যেতে পারি। এবং তাতে তুমি বাঁধা দেবে না। ভারী অবাক হয়েছি তোমার মুখে এমন কথা শুনে। অথচ তুমিই বলেছিলে একদিন, আমাকে হারানোর সামর্থ তোমার নেই। ইউ ক্যাননট অ্যাফর্ড টু লুজ মি। তাহলে হঠাৎ করে কী এমন গুপ্তধন তুমি পেয়ে গেছ যে আমাকে হারাতে তোমার ভাবতে হচ্ছে না। আমাকে সরে যেতে বলছ, প্রকারান্তরে। তাহলে কি ধরে নেব, ক্রিসই সেই কারণ?

সমস্যা নেই। আমি সরে যাব, অবশ্যই, কিন্তু তার আগে আমি দেখতে চাই তুমি ক্রিস অথবা অন্য কারো  সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছ। কাউকে মনে ধরেছে। নাহলে, এই আমি যেখানে আছি, যেভাবে, সেভাবেই থাকব। তুমি চাইলে যোগাযোগ রাখতে পারো। না চাইলেও সমস্যা নেই।

তবে মন খারাপের দিনে কিংবা অনেক সুখের সময়, কারো সঙ্গে যদি সে কষ্ট বা আনন্দের কিছু ভাগ করে নিতে চাও- আমায় স্মরণ করো। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকার গায়ে যেভাবে লেখা থাকে, ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’, সেভাবে ডাকিবামাত্রই তুমি আমায় পেয়ে যাবে। অফটপিক, কখনো কি ভেবে দেখেছ, কেন টাকার নোটে লেখা থাকে চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে?

আজ থাক এটুকুই। আর কিছু লিখতে চাইছি না। একদিনেই সব কথা লিখে ফেললে সামনের দিনগুলিতে কথা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর তুমিও হয়তো আমাকে আর লিখতে চাইবে না। 

পরিশেষে একটা ছোট পরামর্শ দিয়ে শেষ করি—

Never KISS a friend or let a friend kiss you. If you have deeper feelings, never reveal them. You will lose that friend forever. Instead, just give him a hug. A hug is worth a thousand words. A friend is worth more.

তোমার চিরদিনের,
ফাহিম

শেষের লাইন ক’টি ইংরেজিতে লিখল ফাহিম। ইংরেজি ভাষার কিছু সুবিধে আছে। খুব সহজেই যে ভাব প্রকাশ করা যায় ইংরেজিতে, অনেকক্ষেত্রে বাংলায় তা সম্ভব হয় না। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে মেইলটি পাঠিয়ে দিল সিমির ঠিকানায়।

সিমি কোনো উত্তর লিখে পাঠাল না।

হঠাৎ করেই সে নীরব হয়ে গেল। কেন, কী হলো তার মেয়েটি ইদানীং ভীষণ অদ্ভুত আচরণ করছে। কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। ফাহিম কয়েকদিন অপেক্ষা করার পর আরও একটা ইমেইল লিখল।

বর্ষা,
তুমি কি আমার কোনো ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছ? আমায় সরাসরি বলতে পারো। আমি কিছু মনে করব না। ধারণা করছি, কোনো একটা ইমেইলে আমি তোমাকে অনেক টিজ করেছি। হয়তো তুমি বিরক্ত হয়েছ। তুমি যে তা সহজে নাও নি, এখন বুঝতে পারছি। আচ্ছা, আমি কি একটু দুষ্টুমিও করতে পারব না? আশ্চর্য বর্ষা, তুমি কেমন মেয়ে আমার চেয়ে ভালো আর কে জানে, বলো?

সেদিন একটা গানের ক্লিপ পাঠালে। গানের মধ্যে তোমার হাসির শব্দ শুনছিলাম। তখনো বুঝতে পারি নি তুমি এতটা রেগে আছ।

সত্যিই যদি কষ্ট পেয়ে থাকো, আমি ভীষণ দুঃখিত। আমি তোমাকে বিব্রত করার জন্য কিছু বলি নি। তারপরেও ক্ষমা চাইছি। তোমার নীরবতা আমায় কষ্ট দেয়, তা কি বোঝো?

সেদিন বললে ক্রিসের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে না কিছুদিন। ধরে নিচ্ছি, সে কারণেই তোমার মন খারাপ। আচ্ছা, মানুষের কত রকমের ব্যস্ততাই তো থাকতে পারে তাই না? একটু সময় দাও, দেখবে ও ঠিকই সাড়া দেবে। তোমার মন খারাপ জেনেই আমি ফোন করেছিলাম। ভেবেছিলাম, আমার সাথে কথা বলে তোমার মনটা যদি কিঞ্চিৎ ভালো হয়।

আমার মন বলছে, ক্রিসের সাথে তোমার হয়তো কোনো ঝামেলা হয়েছে। তোমার নীরবতাই বলে দেয় তুমি ভালো নেই। একটা কথা বলি বর্ষাযদিও আগেও বলেছি, তোমার সিদ্ধান্তের ওপর আমার আস্থা আছে। আমি জানি আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো ভুল তুমি করবে না। ক্রিসের সঙ্গে তোমার ভালোবাসা কতটা গভীর অন্তত সেটুকু বোঝার বয়স আমার হয়েছে। শুধু এতটুকু জেনে রেখো, বাস্তবতা যে কতটা হিংস্র হতে পারে তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। কাজেই সব পরিস্থিতির জন্য তোমাকে মানসিকভাবে তৈরি থাকতে হবে। তোমাকেই সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে এবং তুমি যা ভাবছ তারচেয়েও ঢের বেশি। এবং শেষ পর্যন্ত মাশুল যা গোনার তোমাকেই গুনতে হবে।

আমি ভীষণ চিন্তিত বর্ষা। তোমার বর্তমান পরিস্থিতি আমাকে ভাবায়। তবে পরিস্থিতি যতই নাজুক হোক না কেন, একা একা সামলে উঠতে না পারলে ডেকো আমাকে। তোমার ভালোবাসার যুদ্ধে সহযোগী হতে তো পারব।

তোমাকে যদি কখনো কোনো সুউচ্চ বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়তে হয়, আমি কিন্তু লাফ দিতে যাব না। আমার হাইট ফোবিয়া আছে। তবে আমি নিচে দাঁড়িয়ে থাকব, তোমাকে ধরার জন্য। আমাকে লুকিয়ো না কিছু। জানাও কী হয়েছে তোমার। সংশয় না রেখে সহজ হও। তুমি জানো, আমি যা বলি তা মিন করেই বলি।

খুব দ্রুত আমার ইমেইলের উত্তর দেবার জন্য তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ বর্ষা। তবে ভুলে যেও না, একটি দীর্ঘ ইমেইল কিন্তু আমার পাওনা। একটি কথা অনেক অনেকবার বলেছি। তুমি জানো ভালো করেই। আমাকে খুব অল্প কয়েকটি বিষয় আনন্দ দেয়। তার একটি হলো, আমার ইনবক্সে যখন তোমার একটি ইমেইল দেখতে পাই। যখন তুমি সময় পাবে না, অথবা লেখার কোনো কিছুই খুঁজে পাচ্ছ না অথবা কোনো আগ্রহই থাকবে না লিখবার, তোমার মেমরি ব্যাংক থেকে অন্তত কিছু পাঠিয়ে দিয়ো। আমি তাতেই খুশি হব।

অশেষ শুভ কামনা,
ফাহিম।

পূনশ্চ: তুমি গান গাইতে গাইতে অথবা বন্ধুদের আড্ডায় কথোপকথনের মাঝে যখন উচ্চস্বরে হেসে দাও, হাসতে হাসতে হেঁচকি তুলে ফেলো— অসাধারণ লাগে। এই সিমিকেই তো আমি চিনি, এ কথা ভাবতেই ভালো লাগে। তোমাদের আড্ডার সাউন্ড ক্লিপটি পাঠানোর জন্য অজস্র ধন্যবাদ।

 

পর্ব-২৯

এরপরে কেটে গেল কিছুদিন।

তারপর আরও কিছুদিন। আরো কিছু সপ্তাহ। সিমির কোনো ইমেইল এল না। ফাহিম অবাক হয়ে ভাবল, কী হলো সিমির? সে কয়েকবার ইয়াহু মেসেঞ্জারে গিয়ে ঘুরে এল। সেখানেও পাওয়া গেল না। শেষ কবে সে এসেছিল বোঝা গেল না। ফাহিম ছোট একটা ইমেইল পাঠাল।

কেউ কি জানে কারও একটা ইমেইলের জন্য কেউ একজন কতদিন ধরে অপেক্ষা করে আছে? কেউ হয়তো জানেই না আর একটা মানুষও কাউকে মনে মনে অনেক খুঁজে।

কারও ইমেইলের অপেক্ষায় কেউ।

ফাহিম অপেক্ষা করতে থাকল।

না, সিমির কোনো মেসেজ, ইমেইল কিছুই এল না। ফাহিম ফোন করল একদিন, কিন্তু সে ফোন ধরল না। কী হলো মেয়েটির? ফাহিম চিন্তায় পড়ে গেল।

কেটে গেল আরো কিছুদিন। আরও কিছু সপ্তাহ। সিমির কোনো ইমেইল এল না।

আরও কিছুদিন। আরও কিছু সপ্তাহ। এক মাস চলে গেল। সিমির কোনো ইমেইল এল না।

সিমি হঠাৎ করেই যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। শুধু তাই নয়, বন্ধ করে দিল ফাহিমের যোগাযোগের সব রাস্তাও। ওর ইমেইল সিমির ইনবক্স অবধি গেল না, ফিরে এল। ফোন করেও পাওয়া গেল না। মেসেঞ্জারেও না।

ফাহিম হিসেব মেলাতে পারল না। কী এমন হলো, কী ঘটল? ফাহিমের কোনো আচরণে কি সে কষ্ট পেয়েছে? কিন্তু ফাহিম এমন কিছুই মনে করতে পারল না—যে কারণে সিমি কথা বলা বন্ধ করে দেবে। যোগাযোগের সব মাধ্যম থেকে সে ফাহিমকে ব্লক করে দিল। কিন্তু কেন?

জীবন গতিশীল।

তাই নীরব প্রস্থানকে সমীচীন বলে মনে হলো ফাহিমের। মন ও মস্তিষ্কে সিমির উপস্থিতি এখনো সরব তবু যোগাযোগ যেহেতু বন্ধ করে দিয়েছে— মেনে না নিয়ে উপায় কী?

আজ এক মাস দুই মাস করে এক বছর, দুই বছর অবশেষে প্রায় দশ বছর পর সিমির সাথে কথা হলো। অথচ এতগুলো বছরের মধ্যে একটিবারের জন্যও যোগাযোগ হয় নি।

ফাহিম তার কাছের এক পারস্পরিক বন্ধুর মাধ্যমে শুনেছিল, সিমি এর মধ্যে একবার আমেরিকা এসেছিল। তিনমাস থেকেও গেছে। কী আশ্চর্য, ফাহিমের সঙ্গে একবার যোগাযোগের চেষ্টাও করে নি সে। ফাহিম এখনো মেলাতে পারে না। কিছুতেই না।

এতগুলো বছরের মধ্যে সিমির কথা যে মনে পড়ে নি ফাহিমের তা নয়। প্রায়ই মনে পড়ত। কেন হঠাৎ করেই কী অভিমানে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিল মেয়েটি, সেই রহস্যের কোনো কূল-কিনারা কখনোই করে উঠতে পারে নি ফাহিম।

জীবন এগিয়ে গেছে। হয়তো সিমির জীবনেও প্রেম এসেছে এরপর। বিয়েও করে থাকতে পারে। ফাহিম কিছুই জানে না। জানার চেষ্টাও করে নি কখনো। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও একসময় সেও ভুলে যায় সিমির কথা। আসলেই কি ভুলে যেতে পেরেছে সে।

হয়তো এটা তার জীবনের একটা নামহীন সম্পর্ক, যেখানে সে অজ্ঞাতকুলশীল মাত্র কিংবা একটা খসড়া পাতা যা অনেকদিন আগেই হকারের দোকানে উঠেছে।

বড়ই বিচিত্র এ মানবজীবন!

Leave a Reply

Your identity will not be published.