আজও হৃদয় গহিনে সালমান

আজও হৃদয় গহিনে সালমান

৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহর পঁচিশতম মৃত্যুবার্ষিকী। এই উপলক্ষে আমাদের এই বিশেষ আয়োজন।

পঁচিশ বছর! ১৯৯৬-এর ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহর অকাল প্রয়াণের পর পঁচিশ বছর— সিকি শতাব্দী কেটে গেছে, মনেই হয় না। সেই দিনের তারুণ্যের হৃদয় মাঝে যেমন ছিলেন তিনি, আজকের তরুণরাও তাকে ভালোবাসে। এই সময়ের জনপ্রিয় নায়ক সিয়ামের কথাই ধরা যাক। তিনি সালমানের এক বড় ফ্যান। তার অভিষেক চলচ্চিত্র ‘পোড়া মন ২’তে সালমান ভীষণভাবে জীবন্ত।

শৈশবে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন তথা সালমান শাহ ছিলেন একজন কণ্ঠশিল্পী। শিশু একাডেমির শিক্ষার্থী ছিলেন। পরে ছায়ানটে ফোক গান শেখেন। চলচ্চিত্র অঙ্গনে পা রাখার পর নিজের দুটি চলচ্চিত্র ‘প্রেমযুদ্ধ’ ও ‘ঋণশোধ’-এ নেপথ্যে কণ্ঠদান করেন।

বারো বছর বয়সে সালমান শিশুশিল্পী হিসেবে বিটিভিতে তার অভিনয়-জীবন শুরু করেন। সেখানকার জনপ্রিয় প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান ‘নতুন কুঁড়ি’তেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। বাংলাদেশ স্কুল অব অ্যাকটিং থেকে গ্রাজুয়েশনও সম্পন্ন করেছিলেন।

১৯৯৩ সালে রিমেক ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-এর মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন সালমান। আর এই ছবির সূত্রেই দর্শকদের মনের মণিকোঠায় আসন করে নেন। এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কেননা এ ছবির ‘রাজ’ চরিত্রটির ভূমিকায় সালমানের মাঝে কখনো কখনো আমির খানের ছায়া উঁকি মারলেও স্বাতন্ত্র্যের স্বাক্ষরও ছিল সুস্পষ্ট।

সেই দৃশ্যটির কথা বলা যেতে পারে, বনে পথ হারিয়ে যখন রেশমীরূপী মৌসুমী আর রাজরূপী সালমান রাত্রিযাপন করছে। রাজ যেহেতু জানে রেশমী তাদের পরিবারের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন এক পরিবারের মেয়ে, সেহেতু সে সংযত আচরণ করছে। রেশমীর প্রতি তার ভালোবাসা নীরবতায় প্রকাশিত। এই দৃশ্যে রাজরূপী সালমানের অভিব্যক্তিতে ভালোবাসার সেই নীরব প্রকাশ স্বাতন্ত্র্যে সমুজ্জ্বল। বেশ কয়েকটি গানের চিত্রায়নেও সালমানের পারফরম্যান্সের কল্যাণে মূল হিন্দি ছবি থেকে ভিন্ন স্বাদ পাওয়া যায়। যেমন ‘ও আমার বন্ধু গো চিরসাথি পথ চলার’ গানটিতে সালমানের অভিব্যক্তি আর অবয়বে পথ চলার দৃঢ়তা মূর্ত হয়ে ওঠে।

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে সালমান শাহর কস্টিউম ঢাকার দর্শকদের নজর কাড়ে। সত্যি বলতে কী, রিমেক এই বাংলা ছবিতে অভিনয়ে সালমান মুম্বাইর আমির খানকে সম্পূর্ণ এড়াতে না পারলেও কস্টিউমের দিক থেকে তিনি নতুন মাত্রা যোগ করেন। এটি অবশ্যই উল্লেখযোগ্য একাট দিক। কেননা ইতিপূর্বে এদেশে নির্মিত হিন্দি ছবির রিমেকে নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা শাখামৃগের মতোই হাস্যকর অনুকরণ করেছেন। এমনকি কস্টিউমের ক্ষেত্রেও।

সালমান বেঁচে থাকা অবস্থায় ১৮টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল, পরে আরও বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র আলোর মুখ দেখে। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রকর্ম হচ্ছে: বিক্ষোভ, অন্তরে অন্তরে, সুজন সখী, স্বপ্নের ঠিকানা, বিচার হবে, তোমাকে চাই, ন্বপ্নের পৃথিবী, সত্যের মৃত্যু নেই, জীবন সংসার, মায়ের অধিকার...।

সালমানের জীবনের সেরা পুরস্কার হলো, দর্শকদের ভালোবাসা এবং সেই ভালোবাসা অফুরান। ‘বিক্ষোভ’-এর জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রত্যাশা করলেও সেটি তার ভাগ্যে জোটে নি।

সালমানের মৃত্যু বেশ রহস্যময়। আপাত দৃষ্টিতে আত্মহত্যা মনে হলেও তা প্রতিষ্ঠা পায় নি মানুষের কাছে। পরে পুলিশ রিপোর্টে সালমানের মৃত্যুকে হত্যা বলেই উল্লেখ করা হয়েছে।

দর্শক-হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন সালমান। শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন মারা গেলেও নায়ক সালমান শাহর মৃত্যু হয় নি।         

Leave a Reply

Your identity will not be published.