বিশ্বকাপের যত হ্যাটট্রিক

বিশ্বকাপের যত হ্যাটট্রিক

গােল আর বলের খেলা ফুটবল। খেলার জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় গােলে। শৈল্পিক গােল যেমন দর্শকদের বিমােহিত করে, আবার একেকটি গােলের কারণে ভক্তদের মনও ভেঙে যায়। একটি গােলই অনেক সময় খেলার জয় নিশ্চিত করে। আর একই ম্যাচে তিনটি গােল দিতে পারলে তাকে মাথায় তুলে রাখতে চায় ভক্তকুল। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে আসর সম্পন্ন হয়েছে ১৯টি। ২০তম আসরে ৫০তম হ্যাটট্রিকটি করেন জার্মানির থমাস মুলার।

বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকের প্রথম দেখা মেলে ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপেই। উরুগুয়ের মন্টিভিডিওতে অ্যাস্তাদিও পার্কি ও সেন্ট্রাল মাঠে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক করেন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ট প্যাটেিউডে। সেই ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্র প্যারাগুয়েকে ৩-০ গােলে হারায়। 

একই বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করেন আরও দুজন। মেক্সিকোর বিপক্ষে আর্জেন্টিনার গুইলার্মা স্টাবিল এবং যুগােস্লাভিয়ার বিপক্ষে উরুগুয়ের পেড্রোসিয়া। তারপর থেকে প্রতিটি বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করাটা ছিল মােটামুটি ধারাবাহিক বিষয়। কেবল ২০০৬ সালের জার্মানি বিশ্বকাপে কোনাে হ্যাটট্রিকের ঘটনা ঘটে নি। সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিকের ঘটনা ঘটে ১৯৫৪ সালের সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপে। সেই বিশ্বকাপে আটটি হ্যাটট্রিকের দেখা পেয়েছিল বিশ্ববাসী।

১৯৫৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক পেয়েছেন ব্রাজিলের পেলে, ইতালির পাওলাে রােসি, হাঙ্গেরির স্যান্ডাের ককসিস, ফ্রান্সের জাস্ট ফন্টেইন, ইংল্যান্ডের হাস্ট, গগরি লিনেকার, আর্জেন্টিনার গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুুতা, জার্মানির গার্ড মুলার এবং রুমেনিগের মতাে ফুটবলাররা।

যেখানে একবার হ্যাটট্রিকের দেখা পাওয়া কষ্টের, সেখানে দুটি করে হ্যাটট্রিকের দুর্লভ রেকর্ডের অধিকারী মাত্র চারজন। হাঙ্গেরির স্যান্ডাের ককসিস, ফ্রান্সের জাস্ট ফন্টেইন, জার্মানির গার্ড মুলার এবং আর্জেন্টিনার গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা।

১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে রাশিয়ার ওলেগ সালেকা করেন পাঁচটি গােল। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক ম্যাচে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ গােলের রেকর্ডও এটি।

আন্তর্জাতিক ফুটবলের অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিকের একমাত্র রেকর্ড আর্জেন্টিনার স্টাবিলের। হ্যাটট্রিক ও দলের পরাজয় ঠেকাতে না পারার ঘটনা ঘটেছে বিশ্বকাপে দুইবার। ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ডের জোসেফ হিউজির হ্যাটট্রিক সত্ত্বেও অস্ট্রিয়ার কাছে ৫-৭ গােলে হারেন। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে সােভিয়েত ইউনিয়নের ইগাের বেলানভের হ্যাটট্রিক সত্ত্বেও বেলজিয়ামের কাছে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয় ৩-৪ গােলে। এক খেলােয়াড় চার গােল করার পরও দল হারার ঘটনা ঘটেছে একবার। ১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপে পােল্যান্ডের আর্নেস্ট উইলিমােস্কি চার গােল করার পরও তার দল ব্রাজিলের কাছে হারে ৫-৬ গােলের ব্যবধানে।

বিশ্বকাপে ফাইনালে একমাত্র হ্যাটট্রিকটি করেন ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্ট। একই ম্যাচে দুটি করে হ্যাটট্রিকের ঘটনা ঘটে সবমিলিয়ে তিনবার।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত হ্যাটট্রিকের ঘটনা ঘটে ১৯৫৪ সালে। চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে অস্ট্রিয়ার এরিক বেস্ট মাত্র ২৪ মিনিটে হ্যাটট্রিক করেছিলেন।

পরিবর্তিত খেলােয়াড় হিসেবে মাঠে নেমে হ্যাটট্রিক করার ঘটনা ঘটেছে মাত্র একটি। হাঙ্গেরিয়ার লাজলাে কিউস পরিবর্তিত ফুটবলার হিসেবে মাঠে নেমে মাত্র ৭ মিনিটে হ্যাটট্রিক করতে সক্ষম হন।

হ্যাটট্রিকের তিনটি গােলই হেড থেকে করার বিরল রেকর্ডের অধিকারী মাত্র দুইজন। ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে কোস্টারিকার বিপক্ষে চেকোস্লোভাকিয়ার টমাস স্কুরাভি এবং ২০০২ সালের বিশ্বকাপে সৌদি আরবের বিপক্ষে জার্মানির মিরােস্লাভ ক্লোসা হ্যাটট্রিকের তিনটি গােলই হেড থেকে করেন।

 ২০১০ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপের ৪৯তম এবং সর্বশেষ হ্যাটট্রিক করেন আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার গঞ্জালাে হিগুয়েন। বিশ্বকাপে ৪৯টি হ্যাটট্রিকের ঘটনা ঘটলেও ম্যারাডােনা, জিদানের মতাে তারকা খেলােয়াড়রা হ্যাটট্রিক বঞ্চিত হয়েছেন।

 বিশ্বকাপ ইতিহাসের ৫০তম হ্যাটট্রিক করেন জার্মানির থমাস মুলার। গত ১৬ জুন পর্তুগালের বিরুদ্ধে তিনি এ রেকর্ড করেন।

হ্যাটট্রিকের তারকারা 

বার্ট প্যাটেনাউডে, গুইলার্মো স্টাবিল, পেলে, পাওলা রােসি, স্যান্ডাের ককসিস, জাস্ট ফন্টেইন, জিওফ হাস্ট, গ্যারি লিনেকার, গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুুতা, গার্ড মুলার, রুমেনিগ, ওলেগা সালেকা, জোসেফ হিউজি, ইগাের বেলানভ, আর্নেস্ট উইলিমােস্কি, জিওএফ হার্স্ট, এরিখ প্রােবস্ট, ল্যাজলাে কিউস, টমাস স্কুরাভি, মিরােস্লাভ ক্লোসা, গঞ্জালাে হিগুয়াইন।

Leave a Reply

Your identity will not be published.