‘পথের দাবী’ থেকে ‘এম্পারার ভার্সেস শরৎচন্দ্র’

‘পথের দাবী’ থেকে ‘এম্পারার ভার্সেস শরৎচন্দ্র’

এই বছর সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’ আর ‘কিলবিল সোসাইটি’ মুক্তি পেয়েছে। বড়দিনে মুক্তি পাবে ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’। এরই মধ্যে নতুন ছবির পরিকল্পনা করে ফেলেছেন সৃজিত। তাঁর আগামী ছবির নাম ‘এম্পারার ভার্সেস শরৎচন্দ্র’।

এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি সৃজিত জানিয়েছেন, “আগামী বছর ‘পথের দাবী’ প্রকাশিত হওয়ার শতবর্ষ। ১৯২৬ সালের ৩১ আগাস্ট এই বই প্রকাশিত হয়েছিল। ইংরেজ সরকার বইটিকে নিষিদ্ধ করে দেয় ১৯২৭ সালের জানুয়ারি মাসে। ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা, বই নিষিদ্ধ হওয়া এবং সমাজে তার প্রভাব, পুরোটা নিয়েই এই ছবি।” জানা গেছে, নভেম্বর মাসে এই ছবির শুটিংয়ের পরিকল্পনা করছেন সৃজিত। তার মাথায় রয়েছে বাংলা ছবির দুনিয়ার প্রথিতযশা অভিনেতাদের নাম, এই ছবির  মুখ্য চরিত্র অর্থাৎ সব্যসাচী মল্লিকের জন্য। তবে কাস্টিং চূড়ান্ত হয় নি। ছবিটি মুক্তি পাবে ২০২৬-এর পয়লা মে।

শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে সব্যসাচী মল্লিকের একটি সংগঠন থাকে, যার নাম ‘পথের দাবী’। এই সংগঠনে সব্যসাচী ছাড়া আরও কয়েকজন ছিলেন, যারা একত্র হয়ে দেশকে কীভাবে স্বাধীন করা যায় এবং এই স্বাধীনতা লাভের জন্য কোন পথে আন্দোলন করা যায়, সেইসব বিষয়ে আলোচনা করতেন। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্যই ছিল দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করা এবং স্বাধীনতার জন্য একজোট হয়ে আন্দোলন করা। এই সংগঠনের কার্যকলাপকে কেন্দ্র করেই উপন্যাসটি এগিয়েছে। সংগঠনটির নাম অনুযায়ী এই উপন্যাসের নামকরণ করা হয়েছে। উপন্যাসটিতে স্বাধীনতা ও ব্রিটিশ শাসকের অত্যাচার থেকে মুক্তির দাবি প্রাধান্য পেয়েছে। তাই উপন্যাসের নাম ‘পথের দাবী’ রাখা হয়েছে। “আমরা সবাই পথিক। মানুষের মনুষত্বের পথে চলবার সর্বপ্রকার দাবি অঙ্গীকার করে আমরা সকল বাধা ভেঙেচুরে চলব।” এই হলো ‘পথের দাবী’র মূলমন্ত্র।

সব মিলিয়ে বইটি ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্তির এক সুন্দর গল্প শোনায়। যেখানে দেশদ্রোহী উপাখ্যান পাওয়া সব্যসাচী পাঠকের মনে সম্পূর্ণভাবে রাজত্ব করে নেন। উপন্যাসটি যেসব ছোট ছোট ঘটনা নিয়ে সাজানো, তা পড়লে স্বাধীনতা অর্জনের পেছনের কঠিন পরিস্থিতির গল্প পাঠক নিজের হৃদয়ে আবিষ্কার করবে। সেখান থেকে দেশপ্রেমের নতুন এক পথ সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। শত্রুপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ের মতো নিজের সত্তার সঙ্গে লড়াইও যে মারাত্মক কঠিন এক লড়াই তা ‘পথের দাবী’ উপন্যাসে শরৎচন্দ্র উপস্থাপন করতে পেরেছেন।

সব্যসাচী মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন শাসন ও সংস্কার দ্বারা ভারতবর্ষের কোনো উপকার হবে না। বস্তুত সব্যসাচী তৎকালীন বিপ্লবপন্থীদের প্রতিনিধি। শরৎচন্দ্র স্বাধীনতা লাভের উপায় হিসেবে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করেছেন। সব্যসাচীর মধ্যেও আমরা এই বক্তব্যের প্রতিধ্বনি শুনি। সব্যসাচী জানে পরাধীন ভারতবর্ষের কল্যাণ প্রচেষ্টা পণ্ডশ্রম মাত্র। তাই কল্যাণ তার কাম্য নয়, সর্বপ্রথম কাম্য স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বিপ্লবকে বেছে নিয়েছেন সব্যসাচী। তার ভাষায়—দূর থেকে এসে যারা জন্মভূমি আমার অধিকার করেছে, আমার মনুষ্যত্ব, আমার মর্যাদা, আমার ক্ষুধার অন্ন, তৃষ্ণার জল সমস্ত কেড়ে নিলে, তারই রইল আমাকে মারার অধিকার, আর রইল না আমার।

লক্ষণীয় এক শ’ বছর আগে যে প্রেক্ষাপটে এই লেখা, সেই পরিস্থিতি বদলেছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। তবে শাসকের বিরুদ্ধাচারণ করা আজও ভয়ংকর পরিণতির দিকে ঠেলে দেয় বলেই অনুভব করেন সমাজের একটা বড় অংশ। সেই নিরিখে ‘এম্পারার ভার্সেস শরৎচন্দ্র’-এ এই গল্প অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হতে পারে দর্শকদের। এই ছবি প্রযোজনার দায়িত্বে থাকছে এসভিএফ এবং দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া। শ্রীকান্ত মোহতা-মহেন্দ্র সোনি এবং রানা সরকারের যৌথ প্রযোজনায় ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ তৈরি করেছেন সৃজিত। সেই টিম ফিরছে নতুন ছবি নিয়ে। সংগত কারণেই ‘এম্পারার ভার্সেস শরৎচন্দ্র’ ঘিরে যে দর্শকদের প্রত্যাশার পারদ চড়ছে, এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

উল্লেখ্য, শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ অবলম্বনে ‘সব্যসাচী’ নামে ১৯৭৭ সালে  সিনেমা নির্মাণ করেছিলেন পীযুষ বসু। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন উত্তমকুমার।

Leave a Reply

Your identity will not be published.