টালিউডের দেব ও শুভশ্রীর প্রেমের কথা কে-না জানে! কিন্তু যখন তাদের সম্পর্কের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি (রুক্সিনী)-র আবির্ভাব ঘটেছিল তখন তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। ফলে তারা ‘ধূমকেতু’ সিনেমায় অভিনয় করলেও ছবিটি আর নানা জটিলতায় মুক্তি পায় নি। এমনকি অন্য কোনো ছবিতেও এই জুটিকে অভিনয় করতে দেখা যায় নি।
এরপর গঙ্গায় অনেক জল গড়িয়েছে। দেব আর রুক্সিনীর সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। অন্যদিকে শুভশ্রীও হয়েছেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর ঘরনি। হয়েছেন তার সন্তানদের মা। কিন্তু দেব ও শুভশ্রীর যে দিন গেছে, তা কি একেবারেই গেছে ? না, রাতের সব তারার মতোই তা লুকিয়ে আছে দিনের আলোর গভীরে। সেটিই সম্প্রতি দেখা গেল ‘ধূমকেতু’-র গ্র্যান্ড ট্রেলার লঞ্চে। অবশ্য সেই অনুষ্ঠানের দুটি হাতের ব্যান্ডের ছবি দিয়ে ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে আগেই দেব লিখেছিলেন, ‘রেডি’ ? আর কী আশ্চর্য, শুভশ্রী সেই স্টোরি নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে শেয়ার করে উত্তরে লিখেন, ‘রেডি’। বলাই বাহুল্য, এই প্রথমবার শুভশ্রী দেবের প্রশ্নের উত্তরে এক প্রকার সাড়া দিয়েছিলেন। আর তাতেই তাদের ভক্ত-অনুরাগীরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন যে, ৪ আগস্ট ‘ধূমকেতু’-র গ্র্যান্ড ট্রেলার লঞ্চে, ছবিটির প্রচারে, তাদের আবার একসঙ্গে দেখা যেতে পারে। আর সেটাই সত্যি হলো।
ব্রেকআপের পর দেব ও শুভশ্রীর মধ্যে কোনো ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা পরস্পরকে অনুসরণ করতেন না। তাই ‘ধূমকেতু’-র গ্র্যান্ড ট্রেলার লঞ্চের অনুষ্ঠানে সঞ্চালক রোহান যখন তাদের দুজনকে একে অপরকে অনুসরণ করার অনুরোধ জানান, তখন কিছুটা ইতস্তত করে শুভশ্রী প্রথমে দেবকে প্রশ্ন করেন, ‘কে কাকে আগে ব্লক করেছিল ?’ এরপর দেব কিছু না বলেই চুপ করে থাকেন। শুভশ্রী তখন নিজের ফোন বের করে দেবকে ফলো করেন। আর দেবও তার ফোন বের করে শুভশ্রীকে ফলো করেন ইনস্টাগ্রামে। অতঃপর এক প্রশ্নের জবাবে দেব বলেন, “আমাদের জীবন পাল্টেছে। ঝগড়া-অশান্তি হয়েছে। দূরত্ব বেড়েছে। ‘ধূমকেতু’ আমাদের কাছে একটা আবেগ। আমি যদি বুক চিরে দেখাতে পারতাম কতটা ভালোবাসি!” আর দেবের উদ্দেশে কিছু বলতে গিয়ে শুরুতে শুভশ্রী উচ্চারণ করেন ‘চ্যালেঞ্জ’ সিনেমার সেই ভাইরাল সংলাপ, ‘আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে ?’ উত্তরে দেব বলেন, ‘কেন ?’ তখন শুভশ্রীর কণ্ঠে শোনা যায়, ‘এমনি’। এরপরই দেব ও শুভশ্রী পরস্পরের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন। দর্শকদের উদ্দেশে শুভশ্রী বলেন, ‘আমি এবং দেব আমাদের জুটিটাকে বাঁচাতে কখনোই খুব বেশি চেষ্টা করি নি। জুটিটা বেঁচে আছে, তোমাদের ভালোবাসায়, সব রকম অনুভূতিতে।’
‘ধূমকেতু’-র গ্র্যান্ড ট্রেলার লঞ্চের সময় শুভশ্রীর স্বামী, স্বনামধন্য নির্মাতা, রাজ চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন না। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজের ব্যস্ততার কথা উল্লেখ করে বলেন, “দেবের ‘প্রাক্তন বান্ধবী’ শুভশ্রী আমার স্ত্রী। প্রত্যেকে মানুষের ‘অতীত’ আছে। আপনার জীবনেও হয়তো আছে। সেটা নিয়ে কথা বললে কি আপনার ভালো লাগবে ? মানুষের অতীত নিয়ে কথা বলা উচিত নয়। এটা কোনো অপরাধ নয়। তার মধ্যে অনেক স্মৃতি আছে, অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। সেটা আছে বলেই ৪ আগস্টের অনুষ্ঠান এত সুন্দর, এত সফল। আমি একে সম্মান করি, ঈর্ষা করি না।”
কিন্তু রাজ চক্রবর্তী ঈর্ষা না করলেও কি ব্যথিত হন নি ? মনে চিনচিনে বেদনার অনুভূতি সঞ্চারিত হয় নি ? অনুষ্ঠানে নিজের না-যাওয়ার কথা বলতে গিয়েই সেটি প্রকাশ করে ফেলেছেন। রাজ বলেছেন, ‘আমি তো এ অনুষ্ঠানে যেতে পারি না। আমি এ ছবির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নই, তৃতীয় পক্ষ। এটা তো আমার বিয়ে হচ্ছে না যে আমাকে থাকতে হবে।’
৪ আগস্টের রাতে ইন্টারনেট যখন দেব-শুভশ্রীকে নিয়ে উত্তাল, তখনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসে রাজের প্রাক্তন স্ত্রী শতাব্দী মিত্রের একটি পোস্ট। একটি কবিতা। ‘আজ তুই যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, আমি অনেক আগেই হেঁটেছি সেই পথ ধরে।/তোর এই বুকের বাঁ দিকের চিনচিনে ব্যথাÑআমারও খুব চেনা, ঠিক একই পথ ধরে।’
চলচ্চিত্রমনস্ক দর্শকমাত্রই জানেন যে, রাজ চক্রবর্তী যখন পরিচালক হিসেবে সংগ্রাম করছিলেন, একটু একটু করে সামনের দিকে এগোচ্ছিলেন, তখন তার পাশে ছিল শতাব্দী মিত্র। তাদের বিয়ে হয় ২০০৬ সালে। আর সাফল্যের মুখ দেখার পর রাজ ডিভোর্স দেন শতাব্দীকে, ২০১১ সালে। এরপর রাজের জীবনে আসে পায়েল, মিমি, শুভশ্রী। শুভশ্রীকে রাজ বিয়ে করেন ২০১৮ সালে।
উল্লেখ্য, সম্পর্ক ভাঙার মুহূর্তে দেব ও শুভশ্রী ২০১৫ সালে সর্বশেষ অভিনয় করেছিলেন ‘ধূমকেতু’ সিনেমায়। সিনেমাটির কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। দুই বছর শুটিং চলে। কিন্তু নানা কারণে ছবিটি মুক্তি পায় নি। অবশেষে দীর্ঘ নয় বছর পর ‘ধূমকেতু’ সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে, আগামী ১৪ আগস্ট।
Leave a Reply
Your identity will not be published.