‘তির-ধনুকে বাজিমাত’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত

‘তির-ধনুকে বাজিমাত’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুই যুগেরও কম সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল খেলার স্বীকৃতি পেয়েছিল আর্চারি। ১৯৭৬ সালে মন্ট্রিল অলিম্পিকে জিমন্যাস্টিকসের অল অ্যারাউন্ড ইভেন্টে ১০-এ ১০ পয়েন্ট স্কোর করে রোমানিয়ার নারী জিমন্যাস্ট নাদিয়া কোমানিচি দিয়েছিলন বিস্ময়ের জন্ম। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেও তেমন বিস্ময়কর সাফল্যের ইতিহাস রচনা করেছে আর্চারি। ২০১৯ সালে হিমালয় কন্যা নেপালে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে ১০টি ইভেন্টের সব ক’টিতে স্বর্ণপদক জয়ে এভারেস্ট ছুঁয়েছে তির-ধনুক। পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হয়েছে ‘১০-এ ১০’। তির-ধনুকের এমন লক্ষ্যভেদের পেছনের গল্পসমগ্রই মূর্ত হয়ে উঠেছে ‘তির-ধনুকে বাজিমাত’ গ্রন্থটিতে।

এটি বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপলের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব হয়ে গেল গতকাল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ক্রিস্টাল বলরুমে, এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।

সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক শামীম চৌধুরীর সম্পাদনায় বইটি প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। বইটি কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদের বর্ণাঢ্য জীবন এবং বাংলাদেশের আর্চারি খেলার উত্থান ও প্রসারে তাঁর অসামান্য অবদানের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেছে। ‘তির-ধনুকে বাজিমাত’ শুধু তাঁর ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ নয়, এটি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে, বিশেষ করে আর্চারির ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং হবে।

অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, লেখক, আর্চারি ফেডারেশনের বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মকর্তা এবং আর্চারিরা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী প্রফেসর ইসমত আরা হায়দার লিটাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।

এই প্রকাশনা উৎসবে বিদেশি অতিথিদের সরব উপস্থিতি অনুষ্ঠানটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। তারা হলেন ওয়ার্ল্ড আর্চারির মহাসচিব টম ডিলেন, ইরাক আর্চারি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট আল মাশাহাদানী সাদ এবং শ্রীলংকার আর্চারি এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুনেত্রা সেনভিরাথনে। এছাড়া অন্যপ্রকাশ-এর প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপলের নিরলস পরিশ্রম, দূরদর্শিতা এবং আর্চারি খেলার প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁরা বলেন, তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ আর্চারি বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। বইটির প্রকাশনা আর্চারি অঙ্গনে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার করবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

‘তির-ধনুকে বাজিমাত’-এর প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আর্চারি ফেডারেশনের সভাপতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান। তিনি বলেন, “চপল এত বেশি খ্যাতি অর্জন করেছে যা বলে শেষ করা যাবে না। খেলার প্রতি তার আলাদা টান থাকার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। সে শুধু একজন খ্যাতিমান ক্রীড়া ব্যক্তিত্বই নয়, একজন সফল ব্যবসায়ীও। বইটির দ্বিতীয় সংস্করণে আশা করব তার ব্যবসায়িক সফলতার কথাও উঠে আসবে। চপল ক্রীড়া জগতে বাংলাদেশের প্রতীক।”

কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল বলেন, “আমার সাথে যে ক্রীড়া পরিবার আছে আজ সেটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। আমার প্রত্যাশার বাইরেও আজ অনেক কিছু হয়েছে। আমি আজ ধন্য। এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিদেশি বন্ধুরা অনুরোধ করেছেন, তাই আমার বইয়ের ইংরেজি সংস্করণ বের করার চেষ্টা করব।”

অনুষ্ঠানের শেষ দিকে কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপলের সাক্ষাৎকার পর্ব সবাইকে মুগ্ধ করেছে।

এখানে বইয়ের বিভিন্ন মজার ও উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরেন কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল। এছাড়া কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপলের কর্মময় জীবন নিয়ে একটি অডিও ভিজুয়্যাল প্রেজেন্টেশনও উপস্থাপন করা হয়।

সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কাজী সাব্বির।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আর্চারির বিস্ময়কর সফলতার পেছনে কাণ্ডারী হিসেবে কাজ করেছেন কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল। ২০০১ সালে আরামবাগে নিজের বাসায় তিনি বুনেছিলেন তির-ধনুকের আধুনিক খেলা আর্চারির বীজ। সেই বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বৃক্ষ, শাখা-প্রশাখা, লতা-পাতা, ফুল-ফলে হয়েছে শোভিত। সত্যি কথা বলতে কী, তিনি বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান ক্রীড়া সংগঠক। শুরুটা তাঁর হ্যান্ডবল দিয়ে। পরবর্তী সময়ে কুস্তিতে জাতীয় পর্যায়ে সংগঠক পরিচয়কে করেছেন বিস্তৃত। বাংলাদেশে খো খো খেলার আঁতুড়ঘর থেকে এই খেলাটির জনপ্রিয়তায় সাংগঠনিক দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে খেলাটিকে নিয়ে গেছেন মহাদেশীয় পর্যায়ে। আরেকটি কথা, কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল কিন্তু জীবনের শুরুতে নিজেও একজন ক্রীড়াবিদ ছিলেন। শৈশব-কৈশোরে খেলেছেন ফুটবল-হ্যান্ডবল।

খো-খো, আর্চারি ফেডারেশনের নির্বাহী দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের মিডিয়া কমিটির সদস্য সচিবেরও দায়িত্ব পালন করেছেন।

সাহিত্যের সঙ্গেও সম্পৃক্ততা ছিল কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপলের। বলা যায়, তাঁর লেখালেখির অভ্যেসটা সেই বাল্যকাল থেকে। মতিঝিল আইডিয়াল হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র যখন, তখন মহল্লার দেয়াল পত্রিকায় ছড়া-কবিতা লিখে পেতেন আনন্দ। স্কুলের দেয়াল পত্রিকা ‘জাগৃতি’-তে নিয়মিত লেখা থাকত তাঁর। উৎসাহী ক’বন্ধু মিলে গড়ে তুলেছিলেন ‘দন্ত্য স’ নামের একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। গত শতকের আশির দশকে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘দন্ত্য স’-এর স্টলও দিয়েছিলেন তাঁরা। বাংলাদেশের খ্যাতনামা কবি শামসুর রাহমানের কবিতা সমগ্র ‘এক ফোঁটা কেমন অনল’ পর্যন্ত প্রকাশ করেছে ‘দন্ত্য স’। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে পারিবারিক প্রসাধনী শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মময় জীবন শুরু করলেও লেখালেখি-লেখা সম্পাদনা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেন নি। এ ছাড়া বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন কর্তৃক প্রকাশিত ম্যাগাজিনেরও সম্পাদক ছিলেন তিনি। দারুণ মলাট, দারুণ প্রচ্ছদ, দারুণ সব লেখা-ছবির ব্যবহারে মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন সব সময়।

Leave a Reply

Your identity will not be published.