ধারাবাহিক রচনা নায়করাজ রাজ্জাক (পর্ব-১২)

ধারাবাহিক রচনা  নায়করাজ রাজ্জাক  (পর্ব-১২)

[এই ধারাবাহিক রচনাটিতে প্রয়াত চিত্রনায়ক রাজ্জাকের জীবন ও কেরিয়ারের নানা দিকের ওপর আলো ফেলা হবে। এখানে নায়করাজ রাজ্জাক সম্পর্কে পাঠকদের নানা কৌতূহল মিটবে, নানা প্রশ্নের উত্তর মিলবে।

এখানে মূর্ত হয়ে উঠবে রাজ্জাকের শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যের দিনগুলি, জীবন সংগ্রাম, নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ এবং পর্যায়ক্রমে নায়করাজ হয়ে ওঠা...। থাকবে সেরা চলচ্চিত্র, সেরা গানের কথা। তাঁর নায়িকা ও পরিচালকদের প্রসঙ্গও উঠে আসবে। চলচ্চিত্রে যেসব কণ্ঠশিল্পীর গানের সঙ্গে তাঁর ঠোঁটের মেলবন্ধন ঘটেছিল, থাকবে তাঁদের কথাও। পরিচালক রাজ্জাক সম্পর্কেও পাঠকেরা জানতে পারবেন; জানতে পারবেন টালিউডে তাঁর দ্বিতীয় ইনিংসের কথা। পরিশেষে অন্য এক রাজ্জাকের অবয়বও ফুটে উঠবে এখানে।

এবার তুলে ধরা হলো পরিচালক রাজ্জাক এবং তাঁর টালিগঞ্জে পদচারণার কথা।]

নায়করাজ রাজ্জাক একজন ভালো পরিচালকও। তিনি যখন এদেশে আসেন তখন কিন্তু শুরুতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। কামাল আহমেদের ‘উজালা’ ও ‘পরওয়ানা’য় তিনি তৃতীয় সহকারী পরিচালক ছিলেন রাজ্জাক। তখন থেকেই হয়তো পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন তার মনে বাসা বেঁধেছিল। তবে তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনার কলাকৌশল শিখেছিলেন জহির রায়হানের কাছ থেকে। তাই রাজ্জাকের পরিচালনায় তার প্রভাবও আছে। এ প্রসঙ্গে রাজ্জাকের ভাষ্য হচ্ছে : ‘পরিচালনায় আমাকে একজনই প্রভাবিত করেছেন, আমাকে যিনি নায়ক বানিয়েছেন। জহির রায়হান সাহেব। তার কাছ থেকেই আমার যত সব অ্যাচিভম্যান্ট, তার অনুপ্রেরণাতেই আমি আজ এতদূর এসেছি। তার ছবিতে আমি অভিনয় করেছি। কিন্তু তার সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে আমি থাকতাম। চিত্রনাট্য লেখা থেকে শুটিং, গান রেকর্ডিং, ডাবিং, এডিটিং তিনি যখন যা করতেন আমি তার পাশাপাশি সবসময় ঘুরতাম। একটা স্বপ্ন তো ছিল আগে থেকেই যে একদিন পরিচালক হব। তো পরিচালনার সবকিছু তার কাছ থেকেই আমি গিলে খেয়েছি।’

১৯৭৭ সালে রাজ্জাক পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। প্রথম ছবি ‘অনন্ত প্রেম’ ।...১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্র সম্পাদক বশির হোসেন ওই ছবির প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন রাজ্জাকের কাছে। তার আবদার—ছবিতে রাজ্জাক শুধু অভিনয়ই করবেন না, ছবিটি পরিচালনাও করবেন। বশির হোসেনের বিশ্বাস ছিল রাজ্জাক পরিচালনা করলে ছবিটি ভালো ব্যবসা করবে। অগত্যা রাজ্জাক রাজি হন। এভাবেই চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে রাজ্জাকের অভিষেক। পরিচালক রাজ্জাকের শেষ চলচ্চিত্র ‘আয়না কাহিনী’, যা ২০১৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল।

রাজ্জাক পরিচালিত ছবিগুলো হচ্ছে: অনন্ত প্রেম (১৯৭৭), মৌচোর (১৯৮১), বদনাম (১৯৮৩), অভিযান (১৯৮৪), সৎভাই (১৯৮৫), চাঁপাডাঙ্গার বউ (১৯৮৬), জিনের বাদশা (১৯৯০), প্রফেসর (১৯৯২), প্রেমশক্তি (১৯৯৩), উত্তর ফাল্গুনী (১৯৯৭), বাবা কেন চাকর (১৯৯৭), সন্তান যখন শত্রু (১৯৯৯), প্রেমের নাম বেদনা (২০০০), মরণ নিয়ে খেলা (২০০১), আমি বাঁচতে চাই (২০০৭), কোটি টাকার ফকির (২০০৮), মন দিয়েছি তোমাকে (২০০৯), আয়না কাহিনী (২০১৩)। উল্লেখ্য, ‘উত্তর ফাল্গুনী’ ও ‘আয়না কাহিনী’ ছাড়া বাকি ষোলটি ছবি পরিচালনার পাশাপাশি রাজ্জাক প্রযোজনাও করেছেন।

এখন পরিচালক রাজ্জাকের উল্লেখযোগ্য ছবির ওপর আলোকপাত করা যাক।

পরিচালক রাজ্জাকের অভিষেক চলচ্চিত্র ‘অনন্ত প্রেম’। ছবিটির ছিল সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ভিন্ন ধরনের। এই ছবিতেই প্রথম আনকাট চুম্বন দৃশ্য ছিল। অবশ্য এই দৃশ্যটি শেষ পর্যন্ত মহিলা দর্শকের কথা ভেবে রাজ্জাক বাদ দিয়ে দেন।

‘অনন্ত প্রেম’ ছিল বাংলাদেশের প্রথম আউটডোরভিত্তিক চলচ্চিত্র। ২৫ ভাগ ইনডোর, ৭৫ ভাগ আউটডোর। সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’-এ নায়িকা কবরীর মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু ‘অনন্ত প্রেম’-এ নায়ক-নায়িকা দুজনই মারা যায়।

প্রথম ছবিতেই রাজ্জাক পরিচালক হিসেবে মুন্সীয়ানা দেখিয়েছেন। ছবিটি দেখে মনেই হয় না এটি তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। আর ছবিটির গল্পও তিনি বড়পর্দায় বাস্তবানুগভাবে তুলে ধরেছেন।

‘অনন্ত প্রেম’-এর আউটডোর শুটিং হয়েছিল কাপ্তাই এবং তৎসংলগ্ন বনে। পরিচালক রাজ্জাককে তৎকালীন সরকার থেকে শুরু করে সবাই সহযোগিতা করেছিলেন। রাজ্জাক ছবির প্রয়োজনে ট্রেন রিজার্ভ করে বাহাদুরবাদে ক্রসিং করেছেন। সত্যিকারের হাসপাতালে শুটিং করেছেন। ববিতাও পুরোপুরি পেশাদার অভিনেত্রীর মতো সহযোগিতা করেছেন।

‘অনন্ত প্রেম’-এর পর রাজ্জাক পরিচালনা করেন ‘মৌচোর’। এই ছবির গল্পের সঙ্গে রাজ্জাকের অতীত জড়িত আছে। কেননা ছবিটি নির্মিত হয়েছিল সলিল সেন রচিত মঞ্চনাটক  ‘মৌচোর’ অবলম্বনে। ওই নাটকে তরুণ বয়সে অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক। যাহোক ‘মৌচোর’ চলচ্চিত্রটির আখ্যানভাগ গড়ে উঠেছে সুন্দরবনের পটভূমিতে। ছবিতে দেখা গেছে এক নতুন নায়িকাকে। কাজরী। নায়িকার নামটিও রাজ্জাকের দেওয়া। বলা যায়, রাজ্জাকের দ্বিতীয় ছবির বিষয়ও ছিল অভিনব। সুন্দরবনে যারা মধু সংগ্রহ করে, তাদের জীবন নিয়ে চলচ্চিত্র—এদেশে তা ছিল প্রথম।

রাজ্জাক পরিচালিত আরেকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ‘অভিযান’। এই ছবিটি আউটডোরভিত্তিক চলচ্চিত্র। ছবির বেশির শুটিং হয়েছিল একটি লঞ্চে। ছবিটির গল্পে দেখা যায় যে, কয়েকজন বেকার যুবক একটি লাভজনক ব্যবসায় নামে। সিলেট থেকে পাথর এনে ঢাকায় তা বিক্রি করা। তারা সেই পাথর আনার জন্য একটি লঞ্চে চড়ে যাত্রা করে। যাত্রা পথে নানা ঘটনা ঘটে। যেমন, নদীতে একটি যুবতীকে ভাসতে দেখে তাকে বাঁচায় এক যুবক। সে অজ্ঞান যুবতীটির মুখ চুষে পেটে জমে থাকা পানি বের করে; মেয়েটির জ্ঞান ফেরায়। লক্ষণীয়, এই দৃশ্যটিও কিন্তু চুম্বন দৃশ্য। কিন্তু এমনভাবে তা তুলে ধরা হয়েছে যে তা মনে হয় না। তাই দৃশ্যটির ব্যাপারে সেই সময়ের সেন্সর বোর্ডের কোনো সদস্য আপত্তি জানায় নি। উল্লেখ্য, এই যুবক-যুবতীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক ও রোজিনা।

‘অভিযান’-এর পরে রাজ্জাক নির্মাণ করেন ‘সৎভাই’। শরৎচন্দ্রের ‘বৈকুণ্ঠের উইল’ অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে মূল গল্পের আবেদন অক্ষুণ্ন রেখেই কিন্তু কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। বলা যায়, বাবার মৃত্যুর পর সম্পত্তি নিয়ে দুইভাইয়ের বিরোধ পারিবারিক রাজনীতির অসাধারণ এক ছবি। এতে বড়ভাইয়ের ভূমিকায় ছিলেন রাজ্জাক আর ছোটভাই আলীরাজ। এটি আলীরাজের প্রথম চলচ্চিত্র। রাজ্জাকই তাকে ব্রেক দিয়েছিলেন।

‘সৎভাই’-এর পরে রাজ্জাক আবার সাহিত্যের দিকে হাত বাড়ান। তবে এবার শরৎচন্দ্র নয়, তারাশংকর বন্দ্যোপ্যাধ্যায়। তারাশংকরের উপন্যাস অবলম্বনে রাজ্জাক নির্মাণ করেন ‘চাঁপাডাঙ্গার বউ।’ ছবিটির চারটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন—এটিএম শামসুজ্জামান, (সেতাব মণ্ডল), শাবানা (চাঁপাডাঙ্গার বউ), বাপ্পারাজ, (মেহতাব মণ্ডল) এবং অরুণা বিশ্বাস (মেহতাবের স্ত্রী)। সাহিত্যের এই চলচ্চিত্রায়নে দর্শক মনোরঞ্জনের কিছু উপাদান থাকা সত্ত্বেও সার্বিক বিচারে এক দক্ষ চলচ্চিত্রকারকেই দেখা গেছে। মূল উপন্যাসটির থিম অক্ষুণ্ন আছে। স্মরণীয় সেই দৃশ্যটি—মেহতাব মণ্ডলের কল্পনায় মা দুর্গা এবং চাঁপাডাঙ্গার বউ একাকার। উল্লেখ্য, এ ছবিতে রাজ্জাক নিজের পুত্র বাপ্পাকে সুযোগ দেন, নায়ক হিসেবে।

‘চাঁপাডাঙ্গার বউ’-এর পর রাজ্জাক নির্মাণ করেন ‘জিনের বাদশা’। এখানে কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গল্পের ছায়া রয়েছে।

‘বাবা কেন চাকর’ পরিচালক রাজ্জাকের আরেকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র। একজন বাবার শেষ বয়সের বাস্তবতা নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি সেই সময়ে খুবই সাড়া জাগিয়েছিল। পরে এটি টালিউডে রিমেক হয়। রাজ্জাকই সেই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।

রাজ্জাক পরিচালিত শেষ ছবি ‘আয়না কাহিনী’। ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিতে গ্রামের এক তেজি মেয়ের জীবন মূর্ত হয়ে উঠেছে।

পরিচালক রাজ্জাকের চলচ্চিত্রকর্ম বিশ্লেষণ করলে আমরা লক্ষ করব যে, শুরুর দিকে তিনি নিজের মতো করে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, নতুন কিছু যোগ করেছেন। ছবিগুলোও ছিল বাস্তবানুগ। পরে পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে মেলোড্রামার দিকে ঝুঁকে পড়েন রাজ্জাক। অবশ্য বরাবরই তিনি দর্শকদের কথা মাথায় রেখেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে রাজ্জাকের ভাষ্য হলো: ‘আমাকে চিন্তা করতে হবে দর্শক কী খাচ্ছে। একেবারে উলঙ্গ বানাব না, কম্প্রোমাইজ করেই কিন্তু দর্শকদের কিছু খোরাক দিতে হবে।’

হ্যাঁ, পরিচালক হিসেবে রাজ্জাক ছিলেন বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রেরই মানুষ। এই ধারার মধ্যেই তিনি সুস্থ ও সুন্দর কিছু দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ছিল একেবারে নতুন। সেই নতুনকে, নতুনত্বকে দর্শক পছন্দও করেছিল। এখানেই পরিচালক রাজ্জাকের জিত।

টালিউড তথা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রশিল্পে রাজ্জাকের পদচারণা তো বহু আগেই শুরু হয়েছিল, সেই গত শতকের পঞ্চাশের দশকে। কেননা রাজ্জাক তো টালিগঞ্জেরই সন্তান। সেখানকার জল-হাওয়ায় বেড়ে উঠেছিলেন তিনি।...তরুণ বয়সে রাজ্জাক প্রথম টালিউডের ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। ছবির নাম ‘রতন লাল বাঙ্গালী’। পরিচালক অজিত ব্যানার্জী। নায়ক-নায়িকা আশীষ কুমার ও সন্ধ্যা রায়। রাজ্জাক ওই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন এক পকেটমারের চরিত্রে। তখন ১৯৫৯ সাল। অবশ্য  ‘রতন লাল বাঙ্গালী’ মুক্তি পেয়েছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর।

টালিউডে রাজ্জাকের দ্বিতীয় ছবি ‘পংক তিলক’। পরিচালক মঙ্গল চক্রবর্তী। এ ছবিতে রাজ্জাককে দেখা গিয়েছিল এক ছাত্র হিসেবে। তৃতীয় ছবি ‘শিলালিপি’-তে একটি গানের দৃশ্যে রাজ্জাক অভিনয় করেন। একজন জুনিয়র শিল্পী তথা এক্সট্রা হিসেবে। সম্মানী হিসেবে পেয়েছিলেন বিশ টাকা। চতুর্থ ছবি ‘এতটুকু আশা’। পরিচালক অজিত ব্যানার্জী। ...সেই সময়ে একজন নবাগত মুসলমান অভিনয়শিল্পীর জন্য টালিউডে প্রতিষ্ঠা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন ছিল। এছাড়া তখন উত্তমকুমার ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রচণ্ড দাপট। অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দরুনও টালিগঞ্জে টিকতে পারেন নি রাজ্জাক। তিনি স্ত্রী ও শিশু সন্তান বাপ্পাকে নিয়ে চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে। অনেক সংগ্রামের পর একসময় নায়ক হিসেবে রাজ্জাক আত্মপ্রকাশ করেন জহির রায়হানের ‘বেহুলা’-র মাধ্যমে। পরে একসময় নায়ক থেকে হন নায়করাজ।

১৯৯৮ সালে টালিউডে রাজ্জাকের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয় ‘বাবা কেন চাকর’-এর রিমেকের মাধ্যমে। ছবিতে বাবার ভূমিকায় রাজ্জাক এবং ছেলের চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।...‘বাবা কেন চাকর’ পশ্চিমবঙ্গে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ব্যবসাসফল হয়। পরিবারের চাপে পড়ে একসময়ের দাপুটে গৃহকর্তার সংসারে গুরুত্ব হারানোর করুণ গল্প সাধারণ দর্শকদের হৃদয় স্পর্শ করে। ফলে টালিগঞ্জে রাজ্জাকের চাহিদা সৃষ্টি হয়। তিনি একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে থাকেন। এছাড়া সেই সময়ে ঢাকার চলচ্চিত্রে অনুপ্রবেশ করেছিল অশ্লীলতা। ফলে এখান থেকে নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়ে টালিউডের ছবিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন রাজ্জাক। একে একে অভিনয় করতে থাকেন—অন্নদাতা, হিরো, এরই নাম প্রেম, জন্মদাতা, রামলক্ষণ, স্বার্থপর, সন্তান যখন শত্রু, অগ্নিপরীক্ষা, নায়ক, রণক্ষেত্র, দেবদূত ইত্যাদি ছবিতে।

‘বাবা কেন চাকর’-এর পর টালিউডে রাজ্জাকের একটা শক্ত অবস্থান গড়ে ওঠে। শুরুর দিকে তার অভিনীত চরিত্রগুলো ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাকে ঘিরেই ছবির গল্প এগিয়ে গেছে। তিনি পার্শ্ব অভিনেতা নন, প্রধান চরিত্রের অভিনেতা। পরে অবশ্য রাজ্জাক পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবেও অভিনয় করেন।

‘বাবা কেন চাকর’-এর সাফল্যের ধারাবাহিকতায় রাজ্জাক প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন রবি কিনাগী পরিচালিত ‘অন্নদাতা’ (২০০২) এবং স্বপন সাহা পরিচালিত ‘জন্মদাতা’ (২০০৮) ছবিতে। ২০০৬ সালে ‘হিরো’ ছবিতে রাজ্জাককে দেখা যায় পুলিশ কনস্টেবল ভবানী শংকর চরিত্রে। পরে অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ তবে প্রধান চরিত্র নয়—এমন চরিত্রেও রাজ্জাক অভিনয় করেছেন টালিউডে।

সবশেষে বলা যেতে পারে যে, টালিউডে রাজ্জাক দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার পর একটি বৃত্ত যেন সম্পূর্ণ হয়েছিল। যে টালিউডে তিনি চলচ্চিত্রাভিনয় শুরু করেছিলেন, সেই টালিউডেই তিনি আবার প্রবেশ করেন বিজয়ীর বেশে। রাজ্জাকের বুকে যে স্বপ্ন লুকানো ছিল—পশ্চিমবঙ্গের দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে ভিড় জমাবে তার ছবি দেখার জন্য, সেটি পূরণ হয়েছিল। এই প্রাপ্তি যে-কোনো বিবেচনায়ই কম নয়।

 

 

Leave a Reply

Your identity will not be published.