রূপের পালে হিমেল হাওয়া

রূপের পালে হিমেল হাওয়া

রূপে রে কহিনু ডাকি
হায় রূপ! তুমি কেন চলে যাও,
তুমি কেন একখানে
স্থির হয়ে রহিতে না পাও

পল্লী­কবি জসীমউদদীনের এই পংক্তিমালায় দেখা যায় রূপ কারও জন্যই চিরস্থায়ী নয়। তবে তাঁর এই কবিতাকে অগ্রাহ্য করতে পারবেন তখনই যখন রূপ ধরে রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন আপনি। রূপের এই যে বাড়াবাড়ি, কবি-সাহিত্যিক ভাবনা তা বলে এসেছে যুগ যুগ ধরে আর এর অন্যতম অনুষঙ্গ কিন্তু আপনার ত্বক। নাজুক ত্বকের ওপরই শীত কামড় বসায়। তাই প্রয়োজন নিজের প্রতি বাড়তি যত্ন। আর এ বিষয়টি ঘিরেই গড়ে উঠেছে এ সংখ্যার প্রচ্ছদ রচনা।

বিউটি এক্সপার্টরা সবসময়ই বলেন, শীতের সময়ে ত্বকের একটু বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। কারণ, এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে, বাইরে প্রচুর ধুলোবালি। তাই শীতের সময় ত্বক এবং চুলের নানা সমস্যা বেশি দেখা যায়। আর ত্বকের এমন অনেক সমস্যা আছে, যেগুলো কোনো সাজ দিয়েই ঢেকে রাখা যায় না।

শুষ্ক ত্বক
অনেকের ত্বকই শীতের সময় অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়। যার কারণে চামড়া ওঠে, ত্বক অনেক সময় ফেটে যায়। এ ধরনের ত্বকের জন্য অবশ্যই নিয়মিত যত্ন দরকার। আবার শীতের সময়টায় চেহারায় কালো কালো ছোপও পড়ে। এগুলো দূর করতে ভেজিটেবল পিলিং এবং থার্মোহার্বের ফেসিয়াল করা উচিত। এতে চেহারার কালো দাগ চলে যাবে এবং ত্বকে এক ধরনের উজ্জ্বলতাও চলে আসবে।

সাধারণ ত্বক
সাধারণ ত্বকে খুব একটা সমস্যা কখনোই হয় না। ফ্রুট ফেসিয়াল, ফ্লাওয়ার ফেসিয়াল, হারবাল ফেসিয়াল, অ্যালোভেরা ফেসিয়ালসহ আরও অনেক ধরনের ফেসিয়াল আছে এ ধরনের ত্বকের যতেœ।

তৈলাক্ত ত্বক
তৈলাক্ত ত্বকের যতেœ হারবাল ফেসিয়াল, অ্যালোভেরা ফেসিয়ালসহ ক্লিন ফেসিয়াল করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া ভেজিটেবল পিল কিংবা মেরো ফেসিয়ালও করা যেতে পারে।

ট্রিটমেন্ট ফেসিয়াল
ত্বকে ব্রণ থাকলে ট্রিটমেন্ট ফেসিয়াল করতে হবে। ব্রণের জন্য পিম্পল ফেসিয়াল, পিগমেন্টের জন্য পিগমেন্টেশন ফেসিয়াল, ভেজ পিল ফেসিয়াল আছে। এগুলো ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী।
অ্যালোভেরা আর থার্মোহার্ব ফেসিয়াল ত্বকের কালো ছোপ দাগ দূর করে। মেছতা দূর করার জন্য আছে ভেজ  পিল ফেসিয়াল ও অ্যালোভেরা ফেসিয়াল, যা ত্বককে পরিষ্কার করবে ভেতর থেকে। ত্বকে খুব বেশি সমস্যা না থাকলে মাসে একবার ফেসিয়াল করাই যথেষ্ট।

শীতে ত্বকের যত্নে
সুন্দর ত্বকের সজীবতা সবাইকে মুগ্ধ করে। সজীব ত্বকের জন্য চাই একটু বাড়তি পরিচর্যা, বিশেষ করে এই শীতের সময়টায়। ত্বকের দিকে নজরটা তাই দিতে হবে সবার আগে। শীতের সময়ে কীভাবে ত্বকের যতœ নিতে হবে সে বিষয়ে বলছেন এক রূপ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, শুষ্ক ত্বকে কাঠবাদাম গুঁড়া এবং ময়দা পানি দিয়ে পেস্ট করে লাগিয়ে কিছু সময় পর ধুয়ে নিন। চালের গুঁড়া এবং শসার রস একসঙ্গে মিশিয়ে তৈলাক্ত ত্বকে হালকা ম্যাসাজও করতে পারেন। তবে এ সময় ত্বকের সজীবতা ধরে রাখতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভাস। পটাসিয়াম আর ম্যাগনেশিয়ামের জন্য খেতে পারেন কলা। এটি ত্বকের জন্য খুব উপকারী। খেজুর খুব ভালো প্রোটিনের উৎস। পারলে প্রতিদিন একটি করে খেজুর খেতে চেষ্টা করবেন। দোকানের ফলের রস না খেয়ে ঘরেই তৈরি করে নিন লেবু, কামরাঙ্গা, আনারস অথবা আপেলের জুস। কফি এবং চা’র পরিবর্তে শসা, গাজর এবং টমেটো খেতে পারেন পর্যাপ্ত পরিমাণে।

শীতের দিনে ফ্রেশ থাকার সহজ উপায়
সকালে ঘুম থেকে উঠে, বাইরে বের হওয়ার আগে এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে মাইল্ড ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। ব্যাগে সবসময় একটা ভেজা টিস্যু রাখবেন, যাতে মুখ তেলতেলে বা শুকনো লাগলে তৎক্ষণাৎ মুছে ফেলতে পারেন।
সকালে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন লাগাতে ভুলবেন না। মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন লাগানো জরুরি। সানস্ক্রিন কেনার সময় এসপিএফ (সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর) লেভেল দেখে নিন। সাধারণত ১৫ বা তার বেশি এসপিএফ দেখে কিনুন। 

যাদের ত্বক তৈলাক্ত, তারা বাইরে থেকে ফিরে বরফের টুকরো দিয়ে মুখে, বিশেষ করে কপালে ও নাকের চারপাশ ঘষে নিন। এতে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। দিনে ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি খান। এতে শরীরের জমে থাকা টক্সিন বেড়িয়ে যাবে।

হার্বাল ট্রিটমেন্ট 
শীতে রিলাক্সড হওয়ার জন্য গোলাপের সুগন্ধ ব্যবহার করুন। গোলাপজলে তুলো ভিজিয়ে মুখ, গলা, ঘাড় মুছে নিন। এতে করে স্কিন সারফেসের সার্কুলেশন ভালো হবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
ঠান্ডা গোলাপজলে তুলো কয়েক মিনিট ভিজিয়ে আইপ্যাড হিসেবে ব্যবহার করুন। চোখ বন্ধ করে শুয়ে চোখের পাতার ওপর গোলাপজলে ভেজানো আইপ্যাড রাখুন। ২০ মিনিট এভাবে শুয়ে থাকুন। চোখের ক্লান্তি, স্ট্রেস কমে যাবে।
লেবুর রস ও গোলাপজল সমপরিমাণে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। স্ট্রেস থেকে এ্যাকনে হলে এই টনিক উপকারে লাগবে। ত্বকের অতিরিক্ত তেলভাব কমিয়ে ত্বক ফ্রেশ রাখতে এই টনিক খুব ভালো কাজ করবে।
রিলাক্স করার জন্য ম্যাসাজও করতে পারেন। ফেসিয়াল ও বডি ম্যাসাজ আরামদায়ক। পায়ের স্ট্রেস কমাতে ফুট ম্যাসাজ আদর্শ। এক্সারসাইজের মতো ম্যাসাজও শরীরে জমে থাকা টক্সিন বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে।

পায়ের যত্নে 
শীতকালে শুতে যাওয়ার আগে কুসুম কুসুম গরম পানিতে হালকা লবণ মিশিয়ে নিন। এবার এতে আধাঘণ্টা পা ডুবিয়ে রাখুন। পা পরিষ্কার হবে আবার আরামও পাবেন। পায়ের স্ট্রেস কমে যাবে। গোড়ালির চামড়াও নরম হবে। তারপর পায়ের পাতায় এক্সফোলিয়েটিং ক্রিম লাগান। ভিজে পায়ে কয়েক ফোঁটা এক্সফোলিয়েটিং ক্রিম দিয়ে ৩ থেকে ৫ মিনিট সার্কুলার মোশনে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন।
মাসে অন্তত একবার অবশ্যই পেডিকিউর করতে হবে। পার্লারে যাওয়ার সময় না হলে বাড়িতেই পেডিকিউর করে নিন। হালকা গরম পানিতে  দুই-তিন ফোঁটা শ্যাম্পু ফেলে পানিটা ভালো করে নেড়ে ১০ মিনিট পা ডুবিয়ে বসে থাকুন। পায়ের চামড়া নরম হয়ে এলে পামিস স্টোন দিয়ে ফাটা জায়গাগুলো ভালো করে ঘষে নিন। ফাটা চামড়া উঠে গোড়ালি পরিষ্কার হলে নরম তোয়ালে দিয়ে শুকনো করে মুছে ফুট ম্যাসাজ ক্রিম দিয়ে পায়ের পাতা দুটো ম্যাসাজ করে নিন। সম্ভব হলে বাইরে বেরোবার সময় এবং রাতে ঘুমানোর সময় পাতলা সুতির মোজা পরুন। পা ঘামার প্রবণতা থাকলে জুতার ভেতরে ফুট পাউডার বা ফুট  স্প্রে ব্যবহার করুন। পা এতে শুকনা থাকবে।

 

সান থেকে সানবার্ন
শীতের উষ্ণ কোমল রোদ অনেকেই ত্বকে মাখতে ভালোবাসেন। অথচ আপনি কি জানেন শীতের রোদেই সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ডি থাকে— যা ত্বকের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর? গরমকালে রোদ ঠেকাতে অনেকেই আমরা ছাতা ব্যবহার করি। কিন্তু শীতকালে ছাতার ব্যবহার কম হয় বলে সানবার্ন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। সানবার্ন এড়াতে কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। 

  • সানবার্নের দাগ দূর করতে ফেশিয়াল স্ক্রাব ব্যবহার করুন। মুখ ভালো করে ধোওয়ার পর ফেশিয়াল স্ক্রাব লাগান। তবে ত্বকে র‌্যাশ থাকলে, লাল ভাব থাকলে স্ক্রাব ব্যবহার করবেন না। তৈলাক্ত ত্বকে স্ত্রাব বেশ কয়েকবার ব্যবহার করতে পারেন। শুষ্ক ত্বকে সপ্তাহে একবার স্ত্রাব লাগাবেন। তারপর দুধ দিয়ে হালকা হাতে মুখ মুছে নেবেন। স্ত্রাব তৈরির ঘরোয়া একটি পদ্ধতি হচ্ছে: ৩ টেবিল-চামচ আমগুঁড়ো আধাকাপ দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে ও ঘাড়ে হালকাভাবে ঘষুন। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন।
  • প্রতিদিন ঠান্ডা দুধে তুলো ভিজিয়ে সানবার্নের ওপর লাগান। ত্বক নরম থাকার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা ভাব বজায় থাকবে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। 
  • সানবার্ন সারাতে তিলের তেল খুবই উপকারী। একমুঠো তিল গুঁড়া করে আধাকাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। দুই ঘণ্টা পর পানিটা ছেঁকে নিন। এই পানি দিয়ে নিয়মিত মুখ ধোবেন। 
  • সানবার্ন থেকে অনেক সময় কালো দাগ দেখা যায়। সাদা পেট্রেলিয়াম জেলি বা ক্রিমের সঙ্গে মোটা দানার লবণ মিশিয়ে দাগের ওপর হালকা হাতে ঘষুন। ধুয়ে ফেলার পর ঠান্ডা দুধ পনের মিনিট লাগিয়ে রাখুন। 
  • দইয়ের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে রাখুন। আধঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। কালো দাগ কমে যাবে। 
  • সানবার্ন যে কেবল মুখেই হয় তা কিন্তু নয়। হাতে ও পায়েও হতে পারে। হাতের জন্য মোটা দানার চিনি, লেবুর রস মিশিয়ে হাতে ঘষুন। চিনির দানাগুলো মিশিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত ঘষতে থাকুন। ১৫ মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলুন। আর পায়ের জন্য পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পা ভিজিয়ে রাখুন। অথবা লেবু দিয়ে পা ঘষতে পারেন। এতে কালো কালো দাগ দূর হয়ে যাবে। 

উইন্টার কেয়ার টিপস 
সাবান দিয়ে বেশি মুখ ধোবেন না। পরিষ্কার হালকা গরম পানি ও ফেসওয়াশ দিয়ে দিনে কয়েকবার মুখ ধুয়ে নিতে পারেন।
শীতে সূর্যের রশ্মির আলট্রা ভায়োলেট ত্বকের জন্য খুব ক্ষতিকর। তাই সূর্যের সরাসরি সংর্স্পশে না আসাই ভালো।
সারাদিনে যথেষ্ট পরিমাণ পানি খান। এতে অতিরিক্ত টক্সিন ও বর্জ্য পদার্থ বেরিয়ে যাবে। আর এতে ত্বক পরিষ্কার থাকার সম্ভাবনা থাকবে।

নিম্নোক্ত উপায়ে শীতে ত্বক পরিষ্কার রাখতে পারেন—

  • শীতের মৌসুম খুব শুষ্ক বলে ত্বক ফেটে যায়। ফলে বাতাসের আর্দ্রতায় স্কিনে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে পরিষ্কার ত্বকে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার লাগানো উচিত। 
  • হালকা গরম পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করতে হবে। গোসলের পরে ময়েশ্চারাইজার বা লোশন লাগাতে হবে। 
  • চুলে ধুলোবালি লেগে চুল ড্রাই হয়ে ফেটে যায়। এক্ষেত্রে নিয়মিত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার লাগাতে হবে সপ্তাহে তিনদিন চুলের গোড়ায় গরম তেল ম্যাসাজ করতে হবে।
  • বাইরে থেকে এসে পা ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে রাতে ঘুমানোর সময় লোশন বা ক্রিম দিয়ে নিন।
  • বালিশের ওয়ার পরিষ্কার করতে হবে নিয়ম করে। 

ছেলেদের জন্য
সাজগোজ কি কেবল মেয়েদের জন্য? মোটেই নয়। অন্যের চোখে নিজেকে সুন্দর করে তোলা ছেলেমেয়ে সবার জন্যই প্রযোজ্য। ছেলেরা বাড়ির বাইরে বেশি সময় কাটায়। ধুলো-ময়লা তাই তাদের আক্রমণ করে বেশি। আর ধুলোবালির অত্যাচারে ত্বক হয়ে পড়ে খসখসে আর অমসৃণ। তাই নিয়ম করে ত্বকের যত্ন নেওয়াটা তাদের জন্যও জরুরি।
বাইরে যাওয়ার আগে হাত-মুখ ধুয়ে ভালো মানের এবং ত্বক উপযোগী সানস্ক্রিন লাগানো সবার জন্য আবশ্যক। আবার অফিসে ঢুকেই কাজকর্মে মন দেবেন না। নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করে নিন। ওয়াশ রুমে ঢুকে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। কারণ শীতের বাতাসের ধুলোবালি ত্বকের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার মুখে মেখে নিন। আর এসব যদি খুব কঠিন কিছু মনে হয়, তাহলে ব্যাগে একটি ভেজা টিস্যুর প্যাকেট রেখে দিন। সেটা দিয়ে মুখ মুছে নিন। ধুলোবালি ত্বক থেকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সতেজ একটা ভাবও চলে আসবে ত্বকে।

ছেলেদের ক্ষেত্রে অনেকেরই নাকের দুই পাশে, ঠোঁটের কোনায় এবং থুতনির কাছে ব্ল্যাকহেডস হয়। এটা ধুলোবালি এবং ঘাম থেকে হয়। যাদের এ সমস্যা থাকে তাদের উচিত সময় করে নিজের একটু যত্ন নেওয়া। যাদের ত্বক শুষ্ক, তারা সানবার্ন ফেশিয়াল করাতে পারেন। যাদের ত্বক তৈলাক্ত, তারা অ্যালোভেরা ও গোল্ড ফেসিয়াল করাতে পারেন। আবার যাদের ত্বকে ব্রণের প্রবণতা আছে তারা আয়ুবের্দিক ফেসিয়াল করাতে পারেন। ব্ল্যাকহেডস দূর করতে নিয়মিত ফেসিয়াল করা প্রয়োজন।
আপনি চাইলে নিজেই নিজের যত্ন নিতে পারেন। রোদে পোড়া ভাব কমাতে চন্দনের প্যাক খুব উপকারী। আবার ত্বকের ভেতরের ময়লা কোষ দূর করতে স্ক্রাবের কোনো বিকল্প নেই। বাজারে নানারকম স্ক্রাব কিনতে পাওয়া যায়। দু’তিনদিন পর পর স্ক্রাব দিয়ে বেশ কিছুটা সময় ধরে ম্যাসাজ করুন। এরপর গরম পানিতে ভাব নিয়ে ব্ল্যাকহেডস রিমুভার দিয়ে নাকের দু’পাশে আস্তে আস্তে চাপ দিন। ব্ল্যাকহেডস বের হয়ে আসবে। আবার সপ্তাহে দুই অথবা তিনদিন ত্বক উপযোগী উপটান লাগিয়ে পাঁচ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের রুক্ষতা দূর হবে।

সাজগোজের পর
নিজেকে সুন্দর করে তোলার জন্য যেমন সাজগোজ প্রয়োজন তেমনি নিজেকে সুন্দর রাখার জন্যও সাজগোজ ঠিকমতো তুলে ফেলার কাজটাও করতে হবে। অনেক সময়ই কোনো অনুষ্ঠান থেকে ফিরে আমরা প্রচণ্ড আলসেমিতে গা ভাসিয়ে দিই। আমাদের মনেই থাকে না যে, ভারী মেকাপ করে যাওয়া হয়েছিল অনুষ্ঠানে। কিন্তু আমরা হয়তো জানিই না, মেকাপ নিয়ে ঘুমানোর ফলে কী ভয়াবহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। ভারী মেকাপের কারণেই মুখে হয় ব্রণ, মেছতাসহ নানারকম সমস্যা।
শীতের সময়টায় মেকআপের পরে মেকআপ তুলে ত্বক ভালো রাখার কয়েকটি উপায়—

  • তৈলাক্ত ত্বক হলে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে পুরো মুখে ভালো মানের লোশন মেখে কিছু সময় রাখুন। পরে তুলো দিয়ে মুছে মুছে মেকআপ তুলে ফেলুন।
  • শুষ্ক ত্বক হলে তুলোতে পানি আর তেল মিশিয়ে তা দিয়ে মুখটা পরিষ্কার করে নিন।
  • হালকা মেকআপ করলে তুলোয় ক্লিনজার মেখে মুখটা ভালো করে পরিষ্কার করে নিন।
  • দিনে কয়েকবার কম ডুগারযুক্ত ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন।
  • মুখ পরিষ্কার হয়ে গেলে মুখে ভালো মানের এবং আপনার ত্বকের উপযোগী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের কোমলতা বজায় থাকবে।
  • কোনো একটি পার্টিতে যদি ভারী মেকআপ করে যেতেই হয়, তাহলে তারপরের বেশ কয়েকটা দিন ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন।
  • ত্বক তৈলাক্ত হলে পাকা পেঁপে বা পাকা কলা চটকে প্যাক তৈরি করে মুখে মাখতে হবে। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে, যেটা শীতের সময় খুই জরুরি।
  • চালের গুঁড়া, টকদই, শসা, গাজরের রস, মুলতানি মাটি দিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে লাগান। একটু ভিজে ভাব থাকা অবস্থাতেই ঘষে ঘষে তুলে ফেলুন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এই প্যাকটি চাইলে দিন তিনেক ফ্রিজে রেখেও ব্যবহার করা যায়।
  • শুষ্ক ত্বক হলে ময়দা, দুধ, মধু এবং মুলতানি মাটি দিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। 

ত্বক চর্চায় খাবার-দাবার 
সতেজ, উজ্জ্বল এবং কোমল ত্বকের জন্য প্রসাধনের পাশাপাশি খাবারের একটি বিশেষ ভ‚মিকা আছে। যারা ত্বক সমস্যায় ভোগেন ডাক্তাররাও আগে তাদেরকে ডায়েট ঠিক করার ব্যাপারে পরামর্শ দেন। ত্বক ভালো রাখার জন্য যে সবসময়ই খুব ভালো ভালো খাবার খেতে হবে এমন নয়। নিয়মিত এমন খাবার খাবেন যা আপনার দেহের প্রয়োজন মেটায় এবং ত্বককে আর্দ্রতা শূন্য না রাখে। আপনার ত্বক ভালো রাখার জন্য কী ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন, তা জেনে নিন। 
ত্বকের যত্নে প্রচুর পরিমাণ পানি খাওয়া প্রয়োজন—এটা খুব পুরোনো তথ্য। নতুন কথা হলো, দিনে আটগøাস পানি খেলে দু’গøাস খাবেন লেবুর রস দিয়ে। লেবুর ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন পাতিলেবু। প্রতিদিন লেবুযুক্ত পানি খেলে এতে ত্বকের আর্দ্রতাই শুধু বজায় থাকবে না, সাথে দেহের টক্সিনও শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। যাদের চায়ের অভ্যেস আছে, তারা মসলা চা খেতে পারেন। ত্বক ভালো থাকবে। তেল জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব কম খাবেন। প্রতিদিনকার খাবার তালিকায় শরবত, ফলের রস রাখুন। জাঙ্কফুড অর্থাৎ বাজারে তৈরি ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন। এর পরিবর্তে যখনই খিদে লাগবে টাটকা সালাদ খান। টাটকা যে-কোনো সবজি খাওয়া সবসময়ই ত্বকের জন্য আদর্শ। আমাদের দেশে সবসময়ই পুদিনা পাতা পাওয়া যায়। সালাদ বা অন্য খাবারে পুদিনা পাতা ব্যবহার করুন। পুদিনা পাতা শরীরকে ঠান্ডা রাখে। সিজনাল সবজি অর্থাৎ যখন যে ঋতুতে যে সবজি পাওয়া যায় খাদ্যতালিকায় সেগুলোকেই প্রাধান্য দেবেন। যারা শুকিয়ে যাচ্ছেন তাদের জন্য শসা হচ্ছে আদর্শ খাবার। খাদ্য তালিকায় নিয়মিত দুধ এবং ডিম রাখুন। দুধ শরীরকে ঠান্ডা রাখে। অনেকেই শারীরিক নানা সমস্যার কারণে ডিম খেতে চান না। ডিম ভাজি না খেয়ে সেদ্ধ ডিম বা ডিম পোচ করে খাবেন। 

ফুড চার্ট
সৌন্দর্য রক্ষায় খাবারদাবারের একটি বিশাল ভ‚মিকা রয়েছে। বেশি খেলে মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা যেমন থাকে, তেমনি কম খেলে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া ত্বকের নানারকম সমস্যাতেও খাবার খুব গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। বয়স অনুযায়ী সঠিক খাবারদাবারের নির্দিষ্ট একটি চার্ট ফলো করলে শরীর যেমন ভালো থাকবে, তেমনি ত্বকও থাকবে দারুণ সুন্দর। কারণ একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য ব্যায়ামের পাশাপাশি সঠিক খাদ্যগ্রহণও দারুণ জরুরি। যারা তারুণ্যের সিঁড়ি অতিক্রম করছেন, তাদের জন্য আদর্শ একটি ডায়েট চার্ট নিচে দেওয়া হলো—
সকাল ৭টা থেকে ৭-৩০ 
১ কাপ চা (চিনি অ্যাভয়েড করতে পারলে ভালো, না হলে মধু দিয়ে), ২টা বিস্কিট (টোস্ট বা ক্রাকার জাতীয়)।
সকাল ৯টা 
রুটি বা পাউরুটি ২  ¯øাইস, চিজ বা মাখন ৫ গ্রাম, ডিম ১টি, কর্নফ্লেক্স ২৫ গ্রাম, দুধ ১ কাপ, সঙ্গে ছানা ১ কাপ। 
সকাল ১০-৩০ থেকে ১১টা 
যে-কোনো একটি মৌসুমী ফল। 
দুপুর ১-৩০ থেকে ২টা 
ভাত ৫০-৬০ গ্রাম, ডাল ১ কাপ, যে-কোনো সবজি তরকারি ১ বাটি, মাছ বা মাংস ১ টুকরো। সালাদ ইচ্ছেমতো। 
বিকেল ৫টা 
১ কাপ চা সঙ্গে বিস্কিট ১টা। 
সন্ধে ৬-৩০ থেকে ৭টা 
ছোলা বা মটর সেদ্ধ দিয়ে মুড়ি বা চিড়ে ১ বাটি অথবা হালকা ১ কাপ স্যুপ। 
রাত ১০টা 
ভাত ১ কাপ বা রুটি ২-৩টা, সবজি ১ বাটি, মাছ বা মুরগি ১ টুকরা, সালাদ ইচ্ছেমতো। 
রাত ১১টা বা ঘুমানোর আগে
দুধ ১ কাপ সঙ্গে দুটো আমন্ড। 
প্রতিদিন নিয়ম করে এই চার্ট ফলো করে খেয়ে দেখুন। দেখবেন আপনার শরীর আস্তে আস্তে চমৎকার একটি শেপে আসতে শুরু করেছে।  

Leave a Reply

Your identity will not be published.